• প্রধানের পদে থেকে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে নিয়মিত বেতন, তৃণমূল নেতার কাছে টাকা ফেরত চাইল পিএইচই
    বর্তমান | ২৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: প্রধানের কুর্সিতে বসেও বছরের পর বছর নিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর (পিএইচই)-এর পাম্প হাউসের নাইট গার্ড হিসেবে পারিশ্রমিক। তাও আবার নিয়মিত কাজ না করেই। একই সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন প্রধান পদের জন্য বরাদ্দ সন্মানিকও। যা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেআইনি। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে বছর বছর দু’টি জায়গা থেকে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রানাঘাট ১ ব্লকের হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গোপাল ঘোষের বিরুদ্ধে। বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধানের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার থেকে পারিশ্রমিক বাবদ দেওয়া টাকা ফেরত চাইল পিএইচই। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় রানাঘাটের রাজনীতি। 

    হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রধানের পদ সামলেছেন তৃণমূল নেতা গোপাল ঘোষ। ওই সময় তিনি পঞ্চায়েতেরই জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের পাম্প হাউস এবং জলাধারের অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী পদে কর্মরত ছিলেন। মাসের শেষে যথারীতি পারিশ্রমিক পেতেন। আবার প্রধানের সন্মানিক ভাতাও নিতেন। এক্ষেত্রে গোপালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে। কীভাবে? পিএইচই’র অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীদের পারিশ্রমিক দিতে গেলে পঞ্চায়েত প্রধানের সই লাগে। তাই গোপালবাবু প্রধান হিসেবে নিজেই সই করে বেআইনিভাবে টাকা  তুলে নিতেন। তৃণমূলের অন্দরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলেও তৎকালীন প্রধানের বিরুদ্ধে কেউই মুখ খোলার সাহস পাননি। 

    কেননা দলের একাংশের দাবি, রানাঘাট ১ ব্লকের দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তাপস ঘোষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন গোপাল। ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাপস গোষ্ঠী কোণঠাসা হতেই গোপালও টিকিট পাননি। তবে নির্দল হিসেবে জিতলেও পরে ফিরে আসেন তৃণমূলে। বর্তমানে তিনি হবিবপুর পঞ্চায়েতের সাধারণ একজন সদস্য। কিন্তু পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান মমতা বিশ্বাস গোপালের নিরাপত্তাকর্মীর বেতন পাওয়ার জন্য কাগজে সই করতে রাজি হননি। দেখা যায়, নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজও করেন না গোপাল। গোটা বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। তাদের নির্দেশে মমতাদেবী অভিযোগ জানান জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরে। তদন্ত করে দপ্তর দেখতে পায়, অভিযোগ সত্যি। গোপালকে চিঠি পাঠিয়ে ভর্ৎসনার পাশাপাশি পারিশ্রমিক বাবদ পাওয়া টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়। মমতা বিশ্বাস বলেন, ‘কাজ না করেই গোপালবাবু মাসিক পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। প্রধান থাকার সময় তিনি নিরাপত্তাকর্মীর পারিশ্রমিকও নিয়েছেন। এটা বেআইনি। তাই আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম।’ রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘তৃণমূল দল কখনই অনৈতিক কাজকে সমর্থন করে না। প্রধানের অভিযোগ মিথ্যে নয়। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে।’ অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রধান গোপাল ঘোষ অবশ্য দায় চাপিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের উপর। তিনি বলেন, ‘আমি প্রধান থাকাকালীন সেই টাকা তুলেছি। চাইলে আমি সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিতেই পারি। কিন্তু পিএইচই কেন সেই টাকা দিয়েছে? তাদের তৎকালীন পদস্থ কর্তারা জানতেন আমি পঞ্চায়েত প্রধান। ২০১৮ সালের অনেক আগে থেকেই আমি অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পঞ্চায়েতের প্রধান ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আনছে। আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।’ বিষয়টি নিয়ে পিএইচই’র এক কর্তা বলেন, ‘অভিযোগ যখন পেয়েছি তখন নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)