• বাল্যবিবাহ রোধে নানাভাবে সচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বেগ
    বর্তমান | ২৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে বাল্যবিবাহের পরিমাণ। এই সমস্যার সমাধান করতে এবার কোমর বেঁধে নামল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে ডিএমের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানান, জেলা প্রশাসনের তরফে বাল্য বিবাহ রোধে তথ্যচিত্র ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। সেই ভিডিও মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধের জন্য সচেতনতামূলক প্রচার চালাবে প্রশাসন। এছাড়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও বসানো হবে বিশেষ সাইনবোর্ড। সেই সাইনবোর্ডে বিভিন্ন ভাষায় থাকবে জেলা শিশু হেল্পলাইন নম্বর (১০৯৮ ও ১১২)। একইসঙ্গে বাল্যবিবাহ রোধে ব্যবস্থা না নিলেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের তরফে। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, জেলায় বাল্য বিবাহের পরিমাণ এক বছরে দশ হাজারের বেশি। আগামী অর্থবছরে সেই সংখ্যা তলানিতে নিয়ে আসার জন্য শপথ নেওয়া হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে কন্যাশ্রীরা। জেলায় তিনশোর বেশি এলাকা চিহ্নিত করে সাইন বোর্ড বসানো হচ্ছে। কোনও নাবালক বা নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে ওই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে মিলবে সুফল।

     এদিন জেলাশাসক বলেন, বাল্য বিবাহ আমাদের শূন্যে নামাতে হবেই। আগামী অর্থ বছরেও টানা নিত্যনতুন কর্মসূচি পালন করা হবে। আমাদের যেকোনও উপায়ে বাল্য বিবাহের পরিমাণ কমাতেই হবে। সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

    প্রসঙ্গত, বাল্য বিবাহ হচ্ছে। বহু চেষ্টা করেও তাতে রাশ টানা যাচ্ছে না। গত একবছর ধরে প্রশাসনের উদ্যোগে লাগাতার প্রচার চালানোয় কিছুটা সুফল মিলেছে। জানা গিয়েছে, ২০২২-’২৩ এর সার্বিক তথ্য খতিয়ে দেখে ব্লক ধরে ধরে পর্যালোচনা হয়েছিল। ওই বছরে জেলায় সাড়ে ১১ হাজার নাবালিকার বিয়ে হয়। সেই তুলনায় এই অর্থবছরে নাবালিকা বিয়ের পরিমাণ কমেছে। জেলায় প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্প করেও চলছে প্রচার। প্রশাসনের পাশাপশি পুলিসের তরফেও নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ২০২১-›২২ সালে ৫৭ জনের বিয়ে রুখে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সেই বছর নাবালিকা বিয়ের সংখ্যাও ছিল বেশি। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২-›২৩ সালে এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮-তে। এরপর ২০২৩ - ‹২৪ সালে ৯৯ জন নাবালিকার বিয়ে রুখে দেয় জেলা প্রশাসন। আর চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৪-›২৫ সালে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৪৪ জন নাবালিকার বিয়ে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এত চেষ্টার পরেও কেন নাবালিকা বিয়ের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না, এনিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

     প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, বেশিরভাগ ব্লকে বাল্য বিবাহের সমস্যা রয়েছে। ধীরে ধীরে প্রতিবছর বাল্য বিবাহ আটকানোর পরিমাণ বাড়ছে। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদেরও বাল্য বিবাহ রোধে বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তবে নাবালক ও নাবালিকাদের বাড়ির সদস্যদের সচেতন হতে হবে। এছাড়া ছোটদের স্মার্ট ফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে অভিভাবকদের। নাহলে এই সমস্যা দিন দিন বাড়বে।

     কেশপুর এলাকার বাসিন্দা চন্দন পাল বলেন, এত কিছু করেও বিশেষ লাভ হবে না। কারণ স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের অনেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। কড়া শাস্তি দেওয়া শুরু করলে সব থেমে যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)