• গানের সুরের মাধ্যমে বদলে গিয়েছে ‘ওদের’ বন্দি জীবন
    বর্তমান | ২৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ‘মানুষ নিজেই মানুষকে বন্দি করে...’। শিক্ষিকাকে জড়িয়ে ধরে গান গাইলেন বছর ৪০-এর সুতন্দ্রা(নাম পরিবর্তিত)। কখনও যাননি স্কুলে। নেই অক্ষর জ্ঞানও। তাই নিজের রচিত গান লিখে রাখার সামর্থ্য নেই তাঁর। ছাত্রীর গান লিখে রাখেন শিক্ষিকা। দীর্ঘদিন পর আসানসোল সংশোধনাগারে থেকে চলতি সপ্তাহে জামিন পেয়ে মুক্তি পান সুতন্দ্রা। আর যাওয়ার সময় নিজের রচনা করা সেই গান গেয়ে শোনান সকলকে। তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত। পারিবারিক অশান্তির জেরে মারধরের মামলায় প্রায় সাত মাস বন্দি ছিলেন। ‘ভায়োলেন্ট’ সেই বন্দির গলায় গানের সুর দেখে আপ্লুত কারা বিভাগ। তাঁরা জানান, সংশোধনাগারে গান শেখানো শুরু হয়েছে। তা মিউজিক থেরাপির মতো কাজ করছে। বন্দিদের মানসিক অবস্থারই পরিবর্তন করিয়ে দিচ্ছে। সহযোগিতা করছে ফের সাধারণ জীবনে ফিরে আসতে।

    সূচনাটা কিন্তু সহজ ছিল না। দু’মাস আগে যখন সংশোধনাগারে গান শিখতে হবে শুনেছিলেন, রে-রে করে উঠেছিলেন মহিলা বন্দিরা। কারারক্ষীর সামনেই কেউ বাইরে থেকে আসা শিক্ষিকাকে অপমান করেছিলেন। কেউ আবার জানতে চেয়েছিলেন, জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে কে গান শুনতে আসবে তাঁদের? অনেকে আবার হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। মহিলা বন্দিদের একটি বড় অংশ আবার নিরক্ষর। তাঁদের গান শেখানোর চ্যা঩লেঞ্জ ছিল আরও কঠিন। তবু হাল ছাড়েননি শিক্ষিকা তপতি মিত্র। তিনি হারমোনিয়ামের পাশাপাশি কারাগারে জোগাড় করেন ব্ল্যাকবোর্ড। গান লেখার পাশাপাশি বর্ণপরিচয়ে অক্ষর চেনানোও চলতে থাকে। প্রথমে সপ্তাহে একদিন, পরে সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস শুরু হয়। অন্য বন্দিদের মতো সুতন্দ্রাও ছিল এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধী। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি ‘সঙ্গীত প্রেমে’ পড়েন। তাঁর মনের বদল আসে। এদিকে তাঁর জামিনের খবরও পান। নিজেকে নতুন করে ফিরে পেয়ে আপ্লুত সুতন্দ্রাও। শিক্ষিকা জানান, সুতন্দ্রার গানের শব্দে একদিকে যেমন অপরাধ করার আক্ষেপ রয়েছে, তেমনই নিজের বন্দি দশার অভিজ্ঞতাও গানের মধ্যে তুলে ধরেছে। আসানসোল সংশোধানাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিবর্তন শুধু মাত্র একজন বন্দির মধ্যে আসেনি। অনেকের মধ্যেই মানসিকতার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই সঙ্গীত চর্চাকে এখন মিউজিক থেরাপি হিসাবেই দেখছেন তারা। আসানসোল সংশোধনাগারের সুপার চায়েন্দ্রী হাইত বলেন, বিষয়টিতে আমরাও বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যার গানের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। তিনিই বন্দি দশা নিয়ে গান বাঁধলেন। এই সাফল্য আমাদের আরও উৎসাহিত করবে। বন্দিরা এখন সাতদিনই শিক্ষিকার কাছে গান শিখতে চাইছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)