• ভিডিও কলে টানা তিন দিন ‘অ্যারেস্ট’, মুক্তি ৮০ লক্ষে
    বর্তমান | ২৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: আচমকা ভিডিও কল! ৫৫ বছরের প্রৌঢ় রিসিভ করে দেখেন, স্ক্রিনের ওপারে ‘পুলিস অফিসার’! লাল চোখ। হাতে তাঁর একগুচ্ছ নথি! প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধে নাকি দু’টি অভিযোগ রয়েছে মুম্বইয়ে। তাঁর নামে হংকং থেকে আসা পার্সেলে রয়েছে সন্দেহজনক জিনিসপত্র! দ্বিতীয়ত, আর্থিক তছরুপের অভিযোগে ধৃত জেট এয়ারওয়েজের নরেশ গোয়েলকে তাঁর আধারকার্ড ব্যবহার করে সিমকার্ড সরবরাহ করা হয়েছে! দুই অপরাধে টানা তিনদিন ডিজিটাল অ্যারেস্ট হয়ে ছিলেন ওই প্রৌঢ়। তাঁকে ভিডিও কলও কাটতেও দেওয়া হয়নি। কেস মেটাতে শুরু হল রফা। প্রথমে ৫০ লক্ষ। তারপর আরও ৩০ লাখ। মোট ৮০ লক্ষ টাকায় অবশেষে মুক্তি!

    কিন্তু, মুক্তির পর তিনি জানতে পারলেন, মুম্বই থেকে কোনও পুলিস অফিসার তাঁকে ভিডিও কল করেননি। ডিজিটাল অ্যারেস্টও নামে কোনও ‘শৃঙ্খলা’ পুলিস বা অন্য কোনও এজেন্সির নেই। তিনি প্রতারণার শিকার! বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্গত নারায়ণপুর থানার ওই ঘটনার তদন্তে নেমে রাজস্থান থেকে অন্যতম অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। মঙ্গলবার তাকে রাজস্থানে গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় আদালতে পেশ করা হয়েছিল। ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে বিধাননগরে নিয়ে আসা হচ্ছে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম মহম্মদ আমির। রাজস্থানের লোধিপুরায় তার বাড়ি।

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আগস্ট মাসে নারায়ণপুরের ওই প্রৌঢ় ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়েছিলেন। তাঁর কাছে ভিডিও কল আসতেই তিনি সত্যি ভেবেছিলেন। টানা একদিন তাঁকে ভিডিও কলে রাখার পর প্রতারকরা প্রথমে তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা নেয়। তারপর আরও ৩০ লক্ষ টাকা চায়। প্রৌঢ়ের কাছে এত টাকা ছিল না। পরে তিনি ঋণ নিয়ে প্রতারকদের দেন। তিনদিন পর মুক্তি পান। এই ঘটনার একমাস পর তিনি জানতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন! এরপরই নারায়ণপুর থানায় গিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে পুলিস ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পুলিস জানতে পারে, পার্কস্ট্রিটে একটি ব্যাঙ্কের শাখায় ওই টাকা ক্রেডিট হয়েছে। যার অন্যতম মাথা রাজস্থানের আমির।

    পুলিস জানিয়েছে, ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বলে বাস্তবে কোনও অ্যারেস্টই নেই। পুরোটাই প্রতারকদের ফাঁদ। এই অ্যারেস্টের নামে আইনি ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে। বিশেষ করে প্রৌঢ় ও বয়স্করা এই ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই ডিজিটাল অ্যারেস্ট হয়ে বেশিরভাগই ‘গৃহবন্দি’ হয়ে থাকছেন। কারণ, প্রতারকরা তাদের বলে দিচ্ছে, বাড়ির বাইরে কোথাও যাওয়া যাবে না। বিধাননগরে এই ধরনের একাধিক প্রতারণা ঘটেছে। কিছুদিন আগে সল্টলেকের এক ব্যক্তি ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়ে পৌনে ২ কোটি টাকা দিয়ে ফেলেছিলেন। লেকটাউনের এক বৃদ্ধা ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়ে বাড়িতে দু’দিন গৃহবন্দি হয়েছিলেন। তারপর ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে মুক্তি পান। সল্টলেকের বিকাশ ভবনের এক প্রাক্তন অফিসার একই ফাঁদে পা দিয়ে ৩২ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা দিয়ে ফেলেছিলেন। কমিশনারেটের দাবি, ডিজিটাল অ্যারেস্ট নিয়ে ভয় পাবেন না। এটি প্রতারকদের চক্র। সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে পুলিসের সহায়তা নিন।
  • Link to this news (বর্তমান)