দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
বন্যায় উল্টে গিয়েছে বাড়ি। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছিল। ভেসে গিয়েছে টাকা, গয়নাগাটি। তাই মেয়ের স্কুলের ফি দিতে পারেননি বাবা। তাই বন্যায় হেলে পড়া পাঁশকুড়ার সেই বাড়ির ছোট্ট মেয়েটিকে পরীক্ষা দিতে দিল না স্কুল। অভিযোগ, ফি বাকি থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীকে একটি আলাদা ঘরে বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন চালান। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে ছাত্রীটি। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাঁশকুড়ার বিডিওর কাছে নালিশ জানান ছাত্রীর মা।
পাঁশকুড়ার বিডিও অমিত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষা দপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্কুলটি যেহেতু পুর এলাকার মধ্যে তাই পুরসভাকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’ গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ বন্যায় পাঁশকুড়ার জন্দড়ায় একটি দোতলা বাড়ি পুরোপুরি কাত হয়ে পড়ে। ওই বাড়ির মালিকের মেয়ে পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার এলাকায় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। হরিয়ানার একটি সংস্থাকে দিয়ে হেলে পড়া বাড়িটিকে সোজা করার কাজ চলছে। প্রাথমিক খরচ ১৪ লক্ষ টাকা। এর বাইরে আরও খরচ রয়েছে বলে দাবি বাড়ির মালিকের।
বাড়ি তোলার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে মেয়ের স্কুলের ভর্তি ফি–সহ তিন মাসের ফি তিনি দিতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। দিন সাতেক আগে ওই ছাত্রীর বাবা স্কুলে গিয়ে ৫ হাজার টাকা জমা দেন। তাঁর দাবি, বাকি টাকা তিনি ধাপে ধাপে মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও তাঁর মেয়েকে পরীক্ষার অ্যাডমিট দেওয়া হয়নি। সোমবার ছিল স্কুলের প্রথম ইউনিট টেস্ট। প্রথমার্ধ্বে ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। দ্বিতীয়ার্ধ্বে ড্রয়িং। ফি বাকি থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে ইংরেজি পরীক্ষা দিতে দেননি বলে অভিযোগ। তাকে একটি আলাদা ঘরে বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
পরিবারের আরও অভিযোগ, ছাত্রীকে যে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি তা বাড়ির লোককে জানানো হয়নি। বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে ছাত্রীটি। ওই ছাত্রী আর স্কুলে যেতে চায় না বলে দাবি পরিবারের। ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে এই স্কুলে নার্সারি থেকে পড়ছে। কোনও দিন ফি বাকি থাকার ঘটনা ঘটেনি। বন্যায় আমাদের বাড়ি পুরোপুরি কাত হয়ে যায়। আমার স্ত্রী ছেলে, মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে রয়েছেন। বন্যায় টাকা পয়সা, সোনার গয়না যা ছিল সব ভেসে যায়। বাড়ি তোলার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মেয়ের স্কুলে ১১ হাজার ৯০০ টাকা বাকি হয়ে যায়। আমি সাতদিন আগে ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে আসি। ধাপে ধাপে সব টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলে আসার পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়েকে পরীক্ষায় বসতে দিলেন না।’
স্কুল কো–অর্ডিনেটর মৌপিয়া সামন্ত বলেন, ‘বকেয়া ফি চেয়ে অভিভাবকের বাড়িতে একাধিকবার নোটিস পাঠানো হয়েছে। তিনি আমাদের কিছুই জানাননি। ফি দিতে না পারায় আমরা মোট চারজন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দিইনি। তিনজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আজ এসে বকেয়া ফি জমা করার পরে আমরা পরীক্ষা নিয়েছি।’ স্কুলের দাবি, সোমবার ওই ছাত্রীর বাবাকে স্কুল থেকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। অভিযোগ, পরে ছাত্রীর বাবা-মা উল্টে ফোনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়েছেন। তবে ছাত্রীকে আলাদা ঘরে বসিয়ে রাখার অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি মৌপিয়ার। তইনি বলেন, ‘অফিস রুমে দু’জন শিক্ষিকা এবং আমি মেয়েটির সঙ্গে ছিলাম।’