কৌশিক দে ■ মালদা
এক প্যাঁচেই কুপোকাত প্রতিপক্ষ। মার্শাল আর্টের সেই কায়দা শিখিয়ে খুদে থেকে শুরু করে অল্প বয়সিদের হাত পাকাচ্ছে তাইকোন্ডোর ব্ল্যাকবেল্ট মাস্টার ইমতেসার হোসেন। ঘরে ঘরে ব্রুস লি'র মতো মার্শাল আর্টিস্ট তৈরি করার লক্ষ্যে ময়দানে নেমেছেন তিনি। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন ইংরেজবাজারের বেসরকারি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক ইমতেসার। বছর ৫০–এর ইমতেসার স্যরের একটাই লক্ষ্য, তাইকোন্ডোয় বিশ্বের দরবারে জায়দা করে নিক মালদা। শুধু তাই নয়, যে ভাবে দিনের পর দিন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে মেয়ে হোক বা ছেলে সকলকে মার্শাল আর্ট শিখিয়ে আত্মরক্ষায় পারদর্শী করে তুলছেন তিনি।
তাঁর একটাই আক্ষেপ, 'নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে ছেলেমেয়েদের ব্রুস লি গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। সরকারি ভাবে এখনও কোনও সহযোগিতা পায়নি। পেলে হয়তো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চ মালদা থেকে অনেক প্রতিভার সন্ধান পাবে।' ইংরেজবাজার পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবিগ্রামের বাসিন্দা ইমতেসার। স্ত্রী হেনা ইয়াসমিন, ছেলে মাসুম হোসেন ও মেয়ে অনুপমা ইয়াসমিনকে নিয়ে সংসার হলেও তাঁর স্বপ্নের ব্যপ্তি পৃথিবীজুড়ে। পরিবারের চারজনই তাইকোন্ডোয় ব্ল্যাকবেল্ট। সঙ্গী ও ছেলেমেয়েকে আত্মরক্ষায় পারদর্শী করে তোলার পাশাপাশি এখন মালদার বহু পড়ুয়াকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার পাঠ দিচ্ছেন ওই শিক্ষক।
ইংরেজবাজারের পিঁয়াজিমোড়, ২ নম্বর গভর্মেন্ট কলোনি, যদুপুর কমলাবাড়ি, পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর সেতুমোড় ও হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডীতে রয়েছে তাঁর 'মালদা তাইকোন্ডো অ্যাকাডেমি'র একাধিক শাখা। ২০২৪-এর নভেম্বরে তাঁর ইংরেজবাজার ক্লাসের চার ছাত্রী—অভিপ্সা বিশ্বাস, আফরিন খাতুন, প্রিয়দর্শিনী রায় ও ইপ্সিতা মণ্ডল জাতীয় স্তরের তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় মহারাষ্ট্রের নাসিকে অংশ নেয়। চারজনেই ব্রোঞ্জ নিয়ে আসে মালদায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ ড্যান ব্ল্যাকবেল্ট সার্টিফিকেটে ভূষিত ইমতেসার আরও বলেন, 'স্কুল থেকেই আমি তাইকোন্ডো শিখে বড় হয়েছি। তার পরেই নিজের ছেলেমেয়েকে সেই শিক্ষা দিয়েছি। ওরাও এখন ব্ল্যাক বেল্ট। সপ্তাহে প্রতিদিন মালদার বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবির চালাই।' সেগুলি চালাতে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও জানালেন তিনি।
খবরের কাগজ, টিভিতে একের পর অপরাধ তাঁকে এতটাই বিচলিত করে তুলেছে, যে আর থেমে থাকতে পারেননি তিনি। বললেন, 'আমার ছ'টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সি ট্রেনি রয়েছে। ছেলেদের থেকে মেয়েদের আগ্রহই ইদানীং বেশি লক্ষ্য করছি। তবে সরকারি সাহায্য পেলে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া সহজ হতো।'