এই সময়, গোপালনগর: দাম্পত্যে অশান্তি ছিল তাঁর বিবাহ–বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে। সেই অশান্তির মধ্যেই মাস ছয়েক আগে স্বামী ও দুই সন্তানকে ছেড়ে ওই তরুণী ঘর বেঁধেছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে। স্বামী তাঁকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী, সে জন্য তিনি বেশ কয়েক বার গিয়েছিলেন স্ত্রীর প্রেমিকের বাড়িতে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
সেই আক্রোশে সোমবার রাতে স্ত্রীর প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করার পর নিজের পেটে চাকু ঢুকিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেন এক ব্যক্তি। উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর এলাকার পাল্লা তল্লাটে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মহিলার নাম দীপু মিস্ত্রি (৩০)। তাঁর স্বামী, ৪৫ বছরের শুকদেব বিশ্বাস গুরুতর জখম অবস্থায় কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে গোপালনগরের ১৭ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন এলাকার শুকদেবের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল দীপুর। ওই দম্পতির ৮ বছরের এক মেয়ে ও ৬ বছরের এক ছেলে।
কালেদিনে দীপু বিবাহ–বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পাল্লা তল্লাটের এক যুবকের সঙ্গে। বিষয়টি শুকদেব জানা ইস্তক দীপুর সঙ্গে তাঁর প্রায়ই অশান্তি হতো। ছ'মাস আগে স্বামী ও দুই সন্তানকে ছেড়ে পাল্লায় ওই যুবকের বাড়িতে চলে যান দীপু। স্থানীয়দের বক্তব্য, পাল্লায় দীপু যাওয়ার পর সেখানে ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়েও হয়েছিল।তার পরেও পাল্লায় স্ত্রীর প্রেমিকের বাড়িতে বেশ কয়েক বার গিয়ে দীপুকে শুকদেব বুঝিয়েসুজিয়ে সংসারে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন বলে পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে দীপু ফিরে যেতে রাজি হননি। স্ত্রীর আচরণে শুকদেবের আক্রোশ ক্রমেই বাড়ছিল। সোমবার রাতে চুপচাপ তিনি একটা ধারালো চাকু নিয়ে পাল্লা এলাকায় স্ত্রীর প্রেমিকের বাড়িতে হাজির হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপুর প্রেমিক সেই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। দীপু তাঁর প্রেমিকের বৌদির ঘরে বসে বিড়ি বাঁধছিলেন। আচমকাই দীপুর পিছন থেকে এসে শুকদেব ওই চাকু দিয়ে তাঁর পেটে ও বুকে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেয় লুটিয়ে পড়েন দীপু। ওই তরুণীর আর্তনাদে কয়েক জন প্রতিবেশী এবং দীপুর প্রেমিকের বৌদি তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন ঠিকই, তবে চাকু উঁচিয়ে তাঁদের প্রাণে মারার হুমকি দেন শুকদেব। তার পর ওই চাকু তিনি নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেন।গোপালনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত দু'জনকে নিয়ে যায় বনগাঁ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা দীপুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শুকদেবকে সেখানে ভর্তি করানো হয়।
বনগাঁ হাসপাতালের বেডে শুয়ে গুরুতর জখম শুকদেব বিশ্বাস বলেন, 'আমার সংসার, দুই ছেলেমেয়েকে ছেড়ে প্রেমিকের কাছে গিয়ে ও (দীপু) ঘর বেঁধেছিল। এটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। আমার দুই সন্তান কষ্ট পাচ্ছিল। তাই, ওকে মেরে ফেলেছি।' অবস্থার অবনতি হওয়ার পরে শুকদেবকে পাঠানো হয় কলকাতার আরজি করে।নিহত দীপুর প্রেমিকের বৌদি নমিতা মণ্ডল বলেন, 'দীপু ছ'মাস ধরে আমার দেওরের সঙ্গে ঘর করছিল। ওর স্বামী বেশ কয়েক বার আমাদের বাড়িতে এসেছিল দীপুকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু ও যায়নি।' পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য মঞ্জু বালার কথায়, 'খুবই দুঃখজনক ঘটনা।'