নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের জমিকাণ্ডের তদন্ত খুলে দিয়েছে ‘প্যান্ডোরার বাক্স’। শুধু বেআইনি জমি কেনাবেচাই নয়, পঞ্চায়েতি আইন লঙ্ঘন, বেআইনি জমি কেনাবেচা, রেজোলিউশনে বেনিয়ম সহ একাধিক অনিয়মের ঘটনা উঠে এসেছে রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট জমা পড়বে জেলাশাসকের কাছে। পঞ্চায়েত প্রধান ফাল্গুনী বিশ্বাস এবং কংগ্রেস নেতা বিজয়েন্দু বিশ্বাস একাধিকবার ‘সবকিছু নিয়ম মেনে হয়েছে’ বলে দাবি করলেও, আসল সত্য এক্কেবারে বিপরীত। শ্মশান তৈরির জন্য গঙ্গা সংলগ্ন শিবপুর ঘাটের কাছে বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের জমি কেনা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছিল, তাতে এবার সরকারি সিলমোহর পড়ল। অভিযোগ উঠেছিল, পঞ্চায়েতি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি পথে পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য তথা পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের শিল্প সঞ্চালক বিজয়েন্দু বিশ্বাসের জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধান ফাল্গুনী বিশ্বাস। জমি কেনার জন্য যে ‹রেজোলিউশন› হয়েছিল তাতে পঞ্চায়েতের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্যদেরই সই ছিল না। সেই বৈঠকে ছিলেন কেবল জমির বিক্রেতা বিজয়েন্দু, প্রধান ফাল্গুনী এবং সিপিএমের দুজন নির্বাচিত সদস্য। সেই বৈঠকে বিজয়েন্দুর জমি কেনা হবে এবং কত টাকায় কেনা হবে, তার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তৃণমূলের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। বিতর্ক এবং বিস্তর জলঘোলার পর জেলাস্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি সেই তদন্ত কমিটি পঞ্চায়েতে গিয়ে সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে তদন্ত করে। বিশেষ সূত্রের খবর, সেই তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগকে মান্যতাই দেওয়া হয়েছে। একাধিক পয়েন্ট ভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান পয়েন্ট, জমি কেনার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতি আইনই মানা হয়নি। আইন বলছে, পঞ্চায়েত এইভাবে জমি কিনতেই পারে না। এছাড়াও, কোনও অনুমতি নেওয়ার পরিবর্তে বৈঠকে উপস্থিত লোকেদের মধ্যেই একজনের জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেয়ার মার্কেটের ভাষায় যাকে বলে ‹ইনসাইডার ট্রেডিং›। জমি কেনার রেজোলিউশনও ঠিকঠাক নেওয়া হয়নি। কীভাবে বিজয়েন্দু পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও নিজের জমি বিক্রি করে পঞ্চায়েতের সঙ্গে ‹ব্যবসা› করলেন, এনিয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। এছাড়াও জমির দাম বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি বলেও অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি আবার সেই বিতর্ক উসকে পায়রাডাঙার একাধিক এলাকায় পঞ্চায়েত প্রধান এবং কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য তথা রানাঘাটের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ডেপুটি কালেক্টরেট অনির্বাণ বসু। তিনি বলেন, তদন্তে আমরা গরমিল পেয়েছি। তবে বাইরে আমরা তা প্রকাশ করব না। তদন্ত হয়ে গেলে সেই রিপোর্ট নির্দিষ্ট জায়গায় জমা পড়বে। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।