সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: বুধবার ডিভিসির দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের (ডিটিপিএস) জমি জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ও দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিস বাহিনী উচ্ছেদ করতে গেলে বস্তিবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়ে। কারখানার সম্প্রসারণের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীদের একাংশ দুর্গাপুর ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা অরিন্দম নায়ককে মারধর করে বলে অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্রামবাসীরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘরবাড়ি ছাড়ার জন্য কিছুদিন সময় চান এলাকার বাসিন্দারা। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে কিছুদিন সময় দেওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
দুর্গাপুরের অর্জুনপুর এলাকায় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের ডিটিপিএস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ১৯৭০সাল থেকে ওই কেন্দ্রে চারটি ইউনিটে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। বহু বছর আগেই তারমধ্যে তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৪নম্বর ইউনিটে কেবল বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতো। ওই ইউনিটও বহু পুরনো হয়ে যাওয়ায় দূষণ বৃদ্ধি হচ্ছিল। কয়েক বছর আগে দূষণ রুখতে ওই ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকার ওই কারখানায় ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিট তৈরির জন্য অনুমোদন দেয়। নতুন ইউনিটের জন্য আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্প্রসারণের জন্য কয়েক বছর আগেই কাজ চালু হয়ে যায়। কিন্তু ডিভিসির জমি জবরদখলকারীদের দখলে থাকায় বিপত্তি ঘটে। জবরদখলকারী বস্তিবাসীকে জমি ছেড়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডিভিসি। জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু হতেই বস্তিবাসীর বাধার সম্মুখীন হতে হয় ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে। বস্তি এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণ সহ পুনর্বাসনের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন চালান। দুর্গাপুর ভূমিরক্ষা কমিটির নামে আন্দোলন, বিক্ষোভ এমনকী অনশন কর্মসূচি হয়। এরই মধ্যে গ্রামবাসীদের একাংশ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে গিয়ে শিল্প চাই দাবি তুলে সরব হয়েছেন। সম্প্রসারণের কাজে বস্তিবাসীর বাধা তাঁরা মানতে নারাজ। এদিন বস্তি উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষকে বাধা দিতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা অরিন্দম নায়েককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। দুর্গাপুর ভূমিরক্ষা কমিটির নেত্রী চুমকি অঙ্কুর বলেন, আমরা বহু বছর ধরে বসবাস করছি। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই উচ্ছেদ করছে। আমরা গরিব মানুষ, কোথায় যাব? আমরা কিছুদিন সময় চেয়েছিলাম। ডিভিসি কিছুদিন সময় দিয়েছে। কিন্তু কিছু গ্রামবাসী আমাদের নেতা অরিন্দমবাবুকে মারধর করেছে। গ্রামের বাসিন্দা মলয় মণ্ডল বলেন, আমরা শিল্প চাই। এলাকায় কর্মসংস্থান চাই। অরিন্দম বহিরাগত। তাঁকে কেউ মারধর করেনি। ডিটিপিএসের আধিকারিক অমিতকুমার মোদি বলেন, আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ডিভিসির জমি খালি করে দিতে হবে।-নিজস্ব চিত্র