• বছরে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা ৮ হাজার প্রশ্নের মুখে বাল্যবিবাহ রদ কর্মসূচি
    বর্তমান | ২৭ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ক’বছর আগের ঘটনা। দপ্তরে বসে কাজ করছিলেন এক শিশু সুরক্ষা আধিকারিক। হঠাৎ ফোনে খবর পেলেন, বরাবাজারের আদিবাসী গ্রামের এক নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। যে করেই হোক আটকাতে হবে। দপ্তরেরই আর এক কর্মী ও কয়েকজন পুলিসকে নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা দিলেন তিনি। গ্রামে পৌঁছতেই তাঁদের ঘিরে ধরল বাসিন্দারা। জানিয়ে দিল, ‘নাবালিকার বিয়ে হবেই। নাহলে...।’ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঘেরাও হয়ে থাকার পর প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরে এলেন তাঁরা। সাড়ম্বরে  হল বিয়ে।

    এই হল পুরুলিয়া জেলার সচেতনতার চিত্র। প্রশাসনের এক আধিকারিকের থেকে জানা গেল,প্রতি বছর পুরুলিয়া জেলায় কত নাবালিকার বিয়ে হয় তার হিসেব তাঁদের কাছে না থাকলেও, জেলায় প্রতি বছর কতজন নাবালিকা প্রসূতি হয়, সেই হিসেব দেখলে বাল্যবিবাহের একটা হিসেব পাওয়া যায়। জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, গত বছরই (২০২৩-’২৪) জেলায় প্রায় আট হাজারের বেশি নাবালিকা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। ওই আধিকারিকের দাবি, নাবালিকা প্রসূতির হিসেব ধরলে গত বছর আঠারোর কম বয়সে বিয়ে হয়েছে অন্তত দশ হাজারেরও বেশি নাবালিকার। সেক্ষেত্রে কতজন নাবালিকার বিয়ে আটকাতে পারে প্রশাসন? শিশু সুরক্ষা দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২৩-’২৪ সালে মাত্র ৪৭ জন নাবালিকার বিয়ের খবর পেয়ে আটকাতে পেরেছে প্রশাসন। ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪৪ জন নাবালিকার বিয়ে আটকাতে পেরেছে প্রশাসন। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’- নামক প্রদীপের নীচে অন্ধকারটা যে কতটা, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।  প্রতি বছর যত সংখ্যক নাবালিকার বিয়ে হয়, তার ১শতাংশও আটকাতে পারে না প্রশাসন। বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্টে যে তথ্য উঠে আসছে, তাতে নাবালিকার বিয়ের ‘খবর’ সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছয় না। আবার, বিয়ে আটকানোর পরেও নজরদারির অভাবে কয়েক দিন পরে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়। রাজ্য থেকে বাল্য বিবাহ নির্মূল করতে স্কুলে স্কুলে তৈরি হয়েছে কন্যাশ্রী ক্লাব, বন্ধু মহল। গ্রাম থেকে জেলা, প্রতিটি স্তরেই তৈরি হয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিটি।গ্রামস্তরের কমিটিতে রয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে স্কুল শিক্ষকরা। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি।কমিটির সদস্যরা যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন না, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, জনপ্রতিনিধিদের একাংশ খবর দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে বিয়ে দিতেইবেশি উদ্যোগী হন। 

    প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, ১৮ বছর পর্যন্ত একটি মেয়ে পড়াশোনা করলে তার বিয়ের খরচ বা উচ্চশিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তা করতে হয় না। সরকারের একাধিক প্রকল্প থেকে তাঁরা সাহায্য পান। তার পরেও কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে? এরজন্য অনেকে সমাজের মানসিকতাকেই দায়ী করছেন। গ্রামাঞ্চলে আজও মেয়েদের পরিবারের ‘বোঝা’ মনে করা হয়। পরিবারের লোকরা বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচেন।আজকাল ইন্টারনেট, মোবাইলের যুগে নাবালিকাদের প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েবিয়ে করার ঘটনাও ঘটছে যথেষ্ট সংখ্যায়। তারা বিয়ে করে ফেলার পর খবর পাচ্ছে প্রশাসন।  এক আধিকারিক বলেন, বাল্য বিবাহ রোধে আমরা সচেতনতা বাড়াচ্ছি। আগামী এপ্রিল থেকেই জেলার সমস্ত স্কুলে আমরা প্রচারে নামব।
  • Link to this news (বর্তমান)