এই সময়: টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাঁকে— রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের মামলায় অভিযুক্ত কয়েক জনের সঙ্গে পার্থর মোবাইল ফোন–কথোপকথনে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি।
তাঁদের বক্তব্য, পার্থর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যাঁদের কথা হয়েছিল, সেই অভিযুক্তরা বিপুল টাকা তুলেছিলেন, নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেন করেছিলেন— এ সব প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। তবে পার্থকে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সেই টাকা পৌঁছেছিল কি না, সে ব্যাপারে কোনও তথ্যপ্রমাণ সিবিআই এখনও পায়নি বলে বুধবার অভিযুক্তদের এক জনের জামিন–মামলার শুনানিতে উঠে এসেছে।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের মামলায় ওই অভিযুক্তর নাম সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের বক্তব্য, পার্থর ঘনিষ্ঠ এবং এই নিয়োগ দুর্নীতি চক্রের অন্যতম এজেন্ট এই সন্তু। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি জানাচ্ছে, ওই ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কথোপকথনের তথ্যপ্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে।
এ দিন বিচার ভবনের সিবিআই আদালতে সন্তুর জামিন–মামলায় সিবিআইয়ের অভিযোগ, সন্তু বিভিন্ন এজেন্ট মারফত অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিতে তাঁদের কাছ থেকে ৬ কোটিরও বেশি টাকা তুলেছিলেন। সিবিআইয়ের দাবি, ওই টাকা কুন্তল ঘোষ এবং আরও কয়েক জন এজেন্টের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোয় লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
সন্তুর জামিন মামলার শুনানিতে আদালতে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি অপরাধের গভীরতা বিবেচনা করে যাতে ওই অভিযুক্তকে জামিন না–দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানান। সিবিআইয়ের বক্তব্য, তদন্ত এখন যে ধাপে রয়েছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সহ–অভিযুক্ত এই সন্তু। এজেন্ট অয়ন শীল, কুন্তল ঘোষের মতো আরও কয়েক জনের সঙ্গে সন্তুর যোগসাজশ ছিল।
বিভিন্ন অযোগ্য প্রার্থীর কাছ থেকে চক্রের সাব–এজেন্ট সরিফুল আলম ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা তুলে সন্তুকে দেন। সেই টাকা নগদে এবং ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের মাধ্যমে সন্তু ও কুন্তলের মধ্যে লেনদেন হয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, এর বাইরেও ৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে এজেন্ট মারফত সন্তু নিয়েছিলেন।
সন্তুর জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে সিবিআই জানায়, তদন্তকে ওই অভিযুক্ত বিভ্রান্ত করেছেন, তদন্তে তিনি অসহযোগিতা করেছেন। শুধু তা–ই নয়, সাব–এজেন্ট সরিফুল আলমকে সন্তু একাধিক বার হুমকি দিয়েছেন বলেও সিবিআইয়ের অভিযোগ।
পাল্টা, সন্তুর গঙ্গোপাধ্যায়ের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জন্য জামিনের আবেদন করে জানান, কাউকে হুমকি দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। সিবিআইয়ের এই মামলায় ১০ জনের মধ্যে ৮ জন জামিন পেয়েছেন। যাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত, সেই অয়ন শীল, কুন্তল ঘোষ–সহ বেশ কয়েক জন জামিনে মুক্ত। সন্তুর আইনজীবীর বক্তব্য, তদন্তের প্রয়োজনে ২০২৩ সালে সিবিআই যখন ডেকেছে, তখনই সন্তু সিবিআই অফিসে গিয়েছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সন্তুকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।
দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে বিচারক জানান, আগামী ৩ এপ্রিল তিনি এই মামলার নির্দেশ দেবেন।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি–র মামলায় বিচার ভবনে ইডি–আদালতে এখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সেখানে এ দিন এক অভিযুক্তকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করানোয় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী ও তাপস মণ্ডলের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত জানান, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত দু’টি সংস্থার ডিরেক্টর মৃণ্ময় মালাকার। তাঁকেই সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছে। কিন্তু তিনি কী ভাবে সাক্ষ্য দেবেন? বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে মৃণ্ময় জানান, তিনি ওই দু’টি সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন। তার পরেই এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলেন বিচারক। আগামী ১০ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি।