রাতে আর কেউ খালি পেটে ঘুমোতে যাবেন না, পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ পাবেন পেটভরা খাবার — এমনই এক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। নাম ‘জ়িরো হাঙ্গার’, ডেডলাইন ২০৩০। পাঁচ বছর পর বিশ্বের জনসংখ্যা যদি ৮৫০ কোটির কাছাকাছি হয়, তা হলে প্রত্যেককে দিনে অন্তত দু’বার পেটভরা খাবার জোগানোর কাজ সহজ নয়।
এ জন্য প্রতি বছর খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বাড়াতে হবে। ধান, গম, ভুট্টা এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদনে যে দেশগুলির নাম উপরের দিকে রয়েছে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘জ়িরো হাঙ্গার’ প্রকল্পকে সফল করতে বড় ভূমিকা থাকবে এ দেশেরও।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কি এই ভরসার মর্যাদা রাখা যাবে? এ প্রসঙ্গে খড়্গপুর আইআইটি–র দুই গবেষক কে জয়নারায়ণন এবং কেএস অনঘ যে গবেষণা চালিয়েছেন, তার ফল কিন্তু আশাব্যঞ্জক নয়। তাঁদের গবেষণাপত্রটি মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা ‘এলসেভিয়ার’–এর আওতাধীন ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’–এ প্রকাশিত হয়েছে।
আর সমস্যাটা মাটিতে নয়, আকাশে! রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘জ়িরো হাঙ্গার’ প্রকল্পকে পুরোপুরি ব্যর্থ করে দিতে পারে ওজ়োন স্তরের দূষণ। ভারতের বিভিন্ন জায়গার খাদ্যশস্যের ফলন এবং উৎপন্ন খাদ্যশস্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, ধান, গম, ভুট্টা এবং অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমিয়ে দেয় ওজ়োনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি।
খড়্গপুর আইআইটির ‘সেন্টার ফর ওশন, রিভার, অ্যাটমোস্ফিয়ার অ্যান্ড ল্যান্ড সায়েন্স’ (কোরাল)–এর এই দুই গবেষক দেখিয়েছেন, গত ক’বছরে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাসে ওজ়োনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। কে জয়নারায়ণন এ নিয়ে ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘যে হারে ওজ়োনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ এর মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ছ’গুণ বেড়ে যাবে। আর এমনটা হলে গমের উৎপান ২০ শতাংশ কমবে, চালের উৎপাদন কমবে ৭ শতাংশ।’
গবেষকরা জানাচ্ছেন, শস্যের উৎপাদন কমতে থাকলে ‘জ়িরো হাঙ্গার’ প্রকল্প কখনই সফল হবে না। ভারতে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়, তা শুধু দেশবাসীরই পেট ভরায় না। তা থেকে বহু উন্নয়নশীল দেশেও উদ্বৃত্ত খাবার জোগান দেওয়া হয়। আগামী দিনে এই উৎপাদন কমতে শুরু করলে অন্যান্য দেশের কথা দূরে থাক, দেশের খিদেই মেটানো কঠিন হবে। তাই বিশ্বের স্বার্থেই ওজ়োন–দূষণে লাগাম দিতে হবে বলে বার্তা গবেষকদের।