• পাইকারি বাজারে হানা, বাজেয়াপ্ত ২০ লক্ষের ওষুধ
    এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: প্রথমে গঞ্জ, তার পর মফস্‌সল, এ বার খোদ কলকাতা। জাল ওষুধের কারবারের খবর সামনে আসার পর থেকে সবার একটাই প্রশ্ন, এর বিস্তার কত দূর? সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনও নেই ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের কাছে। তবে হাওড়ার আমতা, উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের পরে এ বার কলকাতার পাইকারি ওষুধের বাজারে ধরা পড়ল সন্দেহজনক ওষুধ।

    সেগুলি আপাতত পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হচ্ছে। ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আধিকারিকদের সন্দেহ, বাজেয়াপ্ত করা বেশির ভাগ ওষুধই জাল। সব থেকে আশঙ্কার যেটা, তা হলো আসল ওষুধের সঙ্গে এক বাক্সেই ছিল সন্দেহজনক ওষুধগুলি। ফলে সাধারণ ক্রেতারা আসল ওষুধ ভেবেই সেগুলি খাবেন। ওই আধিকারিকরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাতেকলমে দেখান, আসল ওষুধ কী ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

    মঙ্গলবার দিনভর কলকাতার কয়েকটি পাইকারি ওষুধ–বাজারে অভিযান চালান রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিক ও ইনস্পেক্টররা। বাগরি মার্কেট, গান্ধী মার্কেট, মেহতা বিল্ডিং–সহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে হানা দেয় ওই দল। মোট ৬টি দল ১২টি পাইকারি দোকানে তল্লাশি চালায়। প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই ওষুধগুলির গুণমান যাচাই করতে পাঠানো হবে পরীক্ষাগারে। ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাতেকলমে দেখিয়ে দেন, কিউআর কোড স্ক্যানারের সাহায্যে ওষুধের মোড়কের গায়ের কোড স্ক্যান করে আসল–নকল চিহ্নিত করা যায়।

    সূত্রের খবর, আসল ওষুধের বাক্সেই মিলেছে নকল ওষুধ। দশ পাতার একটি ওষুধের বাক্সে ৭-৮ পাতা আসল ওষুধের পাশে মিলছে সন্দেহজনক দু’–তিন পাতা। এই তালিকায় রয়েছে ব্লাড সুগার, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হদযন্ত্র সুস্থ রাখার ওষুধ। রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, হাঁপানির ওষুধও। ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের কর্তারা সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলছেন, ওষুধ কেনার সময়ে অবশ্যই ক্যাশ মেমো নিতে হবে। তাতে যেন ব্যাচ নম্বরের উল্লেখ থাকে। খুচরো বিক্রেতাদের বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার বা স্টকিস্টদের থেকেই ওষুধ নিতে। জাল ওষুধের সুলুকসন্ধানে ওষুধের মজুতদার থেকে শুরু করে উৎপাদনকারী, সব স্তরেই তল্লাশি আপাতত চলবে।

    গত ২১ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার আমতায় জাল ওষুধ–চক্রের পর্দা ফাঁস হয়। মান্না এজেন্সি নামে একটি ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার গুদামে হানা দিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ। সংস্থার মালিক বাবলু মান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সংস্থার গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া জাল ওষুধের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার, গ্যাস্ট্রাইটিসের। নামী সংস্থার হৃদরোগের জাল ওষুধ উদ্ধার হয়েছিল আগরপাড়া, টিটাগড়, নাগেরবাজারেও।

    এরই মধ্যে কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতালেও জাল ইঞ্জেকশনের সন্ধান মিলল। বুধবার বিকেলে উল্টোডাঙার বেসরকারি হাসপাতালে হানা দেন ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আধিকারিকরা। সেখানে থেকে জাল অ্যালবুমিন ইঞ্জেকশনের পাঁচটি ভায়াল বাজেয়াপ্ত করা হয়।

    নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, ওই ইঞ্জেকশনগুলি যে নকল, তাঁদের জানা ছিল না। তাঁরা বেলেঘাটার এক ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে কিনেছিলেন। বেলেঘাটার সেই ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামেও চলে তল্লাশি। সেখানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মেহতা বিল্ডিংয়ের এক স্টকিস্টের দোকানেও তল্লাশি চা‍লানো হয়। স্টকিস্ট জানান, মুম্বইয়ের একটি সংস্থা থেকে ইঞ্জেকশনগুলি কেনা হয়েছিল। এ নিয়ে তদন্ত চলবে বলে জানিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ।

  • Link to this news (এই সময়)