• রীতি মেনে ইফতারে মধুমিতা, রোজা রাখেন, নমাজের ঘর হাসপাতালেই
    এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিরেক্টর। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী মিলিয়ে প্রায় দেড়শো। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন মুসলমান। রমজান মাসে তাঁদের অনেকেই রোজা রাখেন। কাজের ফাঁকেই কেউ কেউ বাড়ি চলে যান। ইফতারের পরে আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন।

    সহকর্মীদের এই কষ্ট মেনে নিতে পারেননি পাঁশকুড়া মেচগ্রাম বড়মা মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিরেক্টর মধুমিতা রায়। তাই হাসপাতালেই ইফতারের ব্যবস্থা করেন তিনি। মুসলিম সহকর্মীদের রোজাতে উৎসাহিত করতে তাঁদের সঙ্গে নিজেও রোজা রাখেন মধুমিতা। শুধু তাই নয়, টানা একমাস সহকর্মীদের ইফতারের যাবতীয় খরচ বহনও করেন মধুমিতা।

    হাসপাতালে ভর্তি মুসলিম রোগীর আত্মীয়দেরও ইফতারের ব্যবস্থা করেন তিনি। প্রতি বছর রমজান মাসে বড়মা মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালে সম্প্রীতির এই ছবি সবার নজর কাড়ে।

    ২০২০ সালে করোনা মোকাবিলা করতে বেসরকারি হাসপাতাল লিজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের মধ্যে প্রথম মেচগ্রামের বড়মা মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালে সরকারি উদ্যোগে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা কালে দীর্ঘদিন মৃত্যু শূন্য চিকিৎসা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নজরে পড়ে এই হাসপাতালের চিকিৎসা পদ্ধতি।

    করোনার সফল চিকিৎসায় সুনাম অর্জন করেন বড়মা মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ভাস্কর রায়। রোগীদের সেবা শুশ্রূষার দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক ভাস্কর রায়ের স্ত্রী মধুমিতা রায়। বড়মা হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পরে মধুমিতা খেয়াল করেন হাসপাতালের মুসলিম সহকর্মীরা রমজান মাসে ইফতার করতে বাড়িতে যেতেন। প্রায় সাত বছর আগে মধুমিতা হাসপাতালের মধ্যে ইফতার চালু করেন। যা আজও চলছে।

    ইফতার এবং নমাজের জন্য হাসপাতালের মধ্যে স্থায়ী রুমের ব্যবস্থা করেছেন মধুমিতা। ইফতারের জন্য সহকর্মীদের একটি আলাদা ফ্রিজও কিনে দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুসলিম সহকর্মীদের রোজাতে উৎসাহিত করার জন্য মধুমিতা নিজে রমজান মাসের প্রতি শুক্রবার রোজা রাখেন।

    হাসপাতালে ভর্তি মুসলিম রোগীদের যে সব আত্মীয় রোজা রাখেন তাঁদেরও দিনের শেষে ইফতারে ডেকে নেন মধুমিতা। সবার সঙ্গে বসে ‘দোয়া’ সেরে যোগ দেন ইফতারে। ওই হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার শাহজাহান মল্লিক বলেন, ‘মধুমিতা ম্যাডামের এমন কাজে আমরা খুব খুশি। এরকম সম্প্রীতি খুব কম জায়গায় দেখা যায়।’

    মধুমিতা বলেন, ‘রমজান মাস সাধনার মাস। মুসলিম সহকর্মীরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে রোজা পালন করতে পারেন, তাই হাসপাতালেই ইফতার, নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করি। আমি প্রতিদিন ভগবানের পুজো করি। আমি মনে করে সব ধর্মের মূল কথাই হলো শান্তি।’

  • Link to this news (এই সময়)