• শেষ পর্যন্ত জলেই গেল সিবিআই-নথি, পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ কোর্টের
    এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৫
  • চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার

    স্টিলের ট্রাঙ্কের মধ্যে রাখা ছিল কুড়ুল, দা, কাঁচি, লোহার রড। তালা খুলতেই দেখা গেল সে সব অস্ত্র জলে ডুবে জং ধরে গিয়েছে!

    পিসি সরকারকে ছাড়াই এমন ম্যাজিকের ঘটনা ঘটল কোচবিহারের দিনহাটায়। কারণ, ওই বাক্স সিল করে রাখায় ভিতরে জল ঢোকালেন কে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

    ২০২১ সালে ভোট পরবর্তী হিংসায় কোচবিহারে বিশ্বজিৎ রায় ওরফে হারাধন নামে এক বিজেপি কর্মী খুন হন। সেই ঘটনায় পরবর্তীকালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার গ্রহণ করে সিবিআই। তদন্তকারীরা অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে একটি লোহার ট্রাঙ্কে ভরে রাখেন। পাশাপাশি সাক্ষীদের সইও সংগ্রহ করা হয়।

    এই ঘটনার সব মিলিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাঁদের মধ্যে সাতজন বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন। পুরো ঘটনার তদন্ত চালিয়ে ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চার্জশিটের সঙ্গে সমস্ত নথি আদালতে পেশ করে সিবিআই। এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সেই ট্রাঙ্কটি মালখানা থেকে কোর্টে নিয়ে আসার পরে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় সকলের। দেখা যায়, খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের সব প্রমাণ গায়েব হয়ে গিয়েছে।

    সিবিআইয়ের আইনজীবী কৌশিক ভদ্রর অভিযোগ, ‘আদালতের নির্দেশে ট্রাঙ্ক খোলার পরে দেখা যায় জল ঢুকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, প্রমাণ সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অস্ত্রগুলোতে জং ধরে গিয়েছে। কোর্টের তত্ত্বাবধানে থাকা এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী ভাবে নষ্ট হয়ে গেল তা তদন্তের জন্য কোর্টে পিটিশন জমা দিয়েছিলাম। আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার জেলা পুলিশ সুপারকে তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন দিনহাটা অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ। পুরো ঘটনা যথেষ্ট সন্দেহজনক।’

    উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৪ মে বিশ্বজিৎ দিনহাটার ব্যাটলা এলাকায় খুন হয়েছিলেন। এই খুনের ঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে, রাজনৈতিক কর্মী খুনের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য কেন এমন অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সিবিআইয়ের আইনজীবীর বক্তব্য, ‘ট্রাঙ্কটি আদালতের মালখানার পরিবর্তে দিনহাটার ট্রেজারি বিল্ডিংয়ে রাখা ছিল। ফলে সেখানে জল ঢুকে যাওয়াটা চরম গাফিলতি।’

    মঙ্গলবার বিচারক তথ্য প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পিটিশন গ্রহণ করেন। বুধবার তিনি খোদ জেলা পুলিশ সুপারকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য,‘এই স্টিলের বক্সে যে সব নথি ছিল তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সেই সুযোগ নিতে পারেন অভিযুক্তেরা। ফলে বিষয়টির তদন্তের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে।’

  • Link to this news (এই সময়)