সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
রাজস্থানের কোটায় পড়তে গিয়ে বেশ কিছু পড়ুয়ার আত্মহত্যার খবর ভাবিয়ে তুলেছিল তাকে। বিশেষ করে, হস্টেলে, বাড়িতে সিলিং ফ্যানে দড়ি বা গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ার ঘটনার কথা শুনে এবং পড়তে গিয়ে তৈরি হয়েছিল এক অদ্ভুত মানসিক অস্বস্তি। এই রাজ্যেও সেই ছবি অচেনা নয়। স্কুল অথবা কলেজের কত পড়ুয়া ক্ষণিকের এক হঠকারী সিদ্ধান্তে শেষ করে দেয় নিজের জীবন। কেন এমনটা হয়? কী ভাবে এই ঘটনা এড়িয়ে বাঁচানো যায় একটা মূল্যবান প্রাণ?
অবশেষে পথ খুঁজে পেয়েছে রুস্তম ঘোষ। পূর্বস্থলীর নীলমণি ব্রহ্মচারী ইনস্টিটিউশনের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্র তৈরি করেছে ‘সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যালার্ম’, যা আত্মহত্যা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক প্রাণ।
পূর্বস্থলীর প্রত্যন্ত অঞ্চল দক্ষিণ সাজিয়া এলাকার ছাত্র বলছে, ‘বিভিন্ন রাজ্যে পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের এই আত্মহত্যার প্রবণতা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তখনই ঠিক করি, এমন যদি একটা যন্ত্র তৈরি করা যায়, যা দিয়ে এই আত্মহত্যাকে আটকে দেওয়া যায়। ভাবতে গিয়েই এই যন্ত্রটা তৈরি করার কথা মাথায় আসে। বানিয়ে ফেলি সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যালার্ম।’
শুরু হয়ে যায় কাজ। সাজিয়ার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই যন্ত্র তৈরির উপাদান খুঁজে বের করতে রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে রুস্তমকে, কিন্তু আবিষ্কার থেমে থাকেনি। যে যন্ত্র তৈরি হয়েছে, সেখানে থাকছে একটি অ্যালার্ম, যা হাইড্রলিক সিস্টেমের মাধ্যমে লাগানো থাকবে পাখায়। কোনও ভাবে সিলিং ফ্যানে টান পড়লেই হাইড্রলিক নেমে আসবে নীচে।
মুহূর্তের মধ্যে বেজে উঠবে অ্যালার্ম। আবার ঘরের বাইরে এই পদ্ধতির মাধ্যমে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে একটি লাল রঙের এলইডি বাল্ব। সিলিং ফ্যানে টান পড়লেই জ্বলে উঠবে সেই আলো। বিশেষ করে, সন্ধের পরে এই আলো জ্বলে উঠলেই সকলে সতর্ক হয়ে যাবেন। এই যন্ত্র চালু রাখতে হলে প্রয়োজন দু’টি ব্যাটারি, সেন্সর এবং হাইড্রলিক সিস্টেম। মোট খরচ পড়বে হাজার টাকার মতো। রুস্তমের কথায়, ‘এই অ্যালার্মের ব্যবহার করে যদি প্রাণ বাঁচানো যায়, তার থেকে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না।’
পূর্বস্থলীর এই স্কুলে প্রত্যেক বছর হয় বিজ্ঞান মেলা। মঙ্গলবার এবং বুধবার, দু’দিন ধরে হয়েছে এই মেলা। রুস্তমের অভিনব সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যালার্ম নজর কেড়ে নিয়েছে সকলের। রুস্তমের আবিষ্কার পেয়েছে পুরস্কারও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম বসাক বলছেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনীশক্তিকে প্রস্ফূটিত করতে আমরা প্রতি বছর এই ধরনের বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে থাকি।’
তবে শুধু রুস্তম–ই নয়, চমক দিয়েছে এই স্কুলেরই দুই ছাত্র রূপল দাস এবং সৌভিক ঘোষের আবিষ্কার। সপ্তম শ্রেণির এই দুই ছাত্র তৈরি করেছে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়া চালকদের সতর্ক করতে বিশেষ ধরনের অ্যালার্ম। এই বিশেষ অ্যালার্ম চালকের চশমায় লাগানো থাকবে। পাঁচ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় চোখের পাতা বন্ধ থাকলেই বেজে উঠবে এই বিশেষ অ্যালার্ম। একটি সেন্সরের সাহায্যে পুরো কাজটি হবে। গাড়ি দুর্ঘটনা থেকেও রক্ষা পাবেন চালক বা গাড়ির মধ্যে বসে থাকা আরোহী।