এই সময়, শিলিগুড়ি: দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। পুরসভা তো নয়, যেন কোনও কর্পোরেট অফিস। টাইলস, মার্বেল পাথরে মোড়া আগাগোড়া। পালিশ করা কাঠ দিয়ে সাজানো দেওয়াল। জানলার বদলে কাচ দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা বিল্ডিং।
শিলিগুড়ি পুরসভার নতুন ভবন এ ভাবেই সাজানো হচ্ছে। আপাতত পাঁচ তলা। পরে ছ’তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা যাবে। জানা গিয়েছে, এক তলার পুরোটা পার্কিং। দোতলায় কর্মচারীদের বসার ঘর। তিন তলায় আধিকারিক এবং মেয়র পারিষদদের বসার ঘর।
চার তলায় মেয়র, কমিশনার, সচিবের ঘর। থাকছে লিফট, চওড়া সিঁড়ি। পুরসভার মিটিং হল তৈরি হচ্ছে পাঁচ তলায়। ওই ঘরেই মাসিক সভা, ইত্যাদি করা হবে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, ‘অনেক আগেই পুরসভার নতুন ভবন করা যেত। রাজ্য সরকার টাকাও দিয়েছিল। পুরোনো বোর্ড কেন করেনি জানি না।’
জানা গিয়েছে, বাম আমলে পুর ভবন তৈরির জন্য রাজ্য সরকার ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু তৎকালীন পুরবোর্ড বরাদ্দ টাকায় ভবন তৈরি না-করায় ২ কোটি টাকা ফেরত চলে যায়। ওই টাকা ফেরত চাইতে উঠেপড়ে লেগেছেন গৌতম। রাজ্য সরকারকে চিঠিও লিখবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের কোটার ওই ২ কোটি টাকা সরকারের কাছে চাইব।’
বাম জমানায় শিলিগুড়ি পুরসভায় একটি তিন তলা ভবন ছিল। কিন্তু কাজের চাপ আর কর্মীদের ভিড়ে নাকাল হওয়ার মতো দশা। দপ্তরের রেকর্ড সংরক্ষণের উপায় ছিল না। জায়গার অভাবে নথি বোঝাই আলমারি বারান্দায় রেখে দিতে হতো। মার্কেটিং দপ্তর ছিল হিলকার্ট রোডে পুরসভারই একটি ভবনে। ভিড় সামলাতে পুরসভা বরো অফিসগুলিকে শহরের নানা প্রান্তে ভাড়াবাড়িতে করা হয়। নতুন ভবন তৈরি হলে সেগুলিকে সরিয়ে পুরসভার স্থায়ী ভবনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সেই কাজ করা হবে।
এ টুকু হলেও কথা ছিল। বর্তমান পুরবোর্ড নয়া ভবনকে সামনে রেখে এলাকাটিকে ‘কপোর্রেশন পাড়া’ হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। পুরোনো ভবনের সঙ্গে টেবিল টেনিস কোচিং ক্লাবের ঘরের উপরে তৈরি হচ্ছে দোতলা বিল্ডিং। পুরসভার ইউপিই দপ্তরের সঙ্গে পুরোনো ভবন মিলিয়ে দিতে থাকছে যাতায়াতের ব্যবস্থা। পুরভবন লাগোয়া রাস্তার ওপারে পুরসভার জমি রয়েছে।
সেই জমিতে তৈরি হয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তর। তার সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে রেকর্ড রুম। সেটিও ছোট পাটাতান দিয়ে যুক্ত করার পরিকল্পনা হয়েছে। পুরসভার সামনে পান্থনিবাস রয়েছে। মূলত পর্যটকদের রাত্রিবাসের জন্য তৈরি করা হয়েছে। মেয়র বলেন, ‘গোটা চত্বরটি ঘিরে কেবল পুরসভারই সমস্ত দপ্তর তৈরি হচ্ছে। ফলে এটিও অনেকটা কর্পোরেশন পাড়ার চেহারা নেবে। পরিষেবা পেতে মানুষকে যাতে এ দিক ওদিক ছোটাছুটি করতে না-হয় সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।’