• পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচে জোর টক্কর পশ্চিম মেদিনীপুরে
    এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, খড়্গপুর: তীব্র লড়াই জমে উঠেছে। এ লড়াই উন্নয়নের নিরিখে প্রথম হওয়ার লড়াই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রামের উন্নয়নে কে বেশি এগিয়ে, তা নিয়েই চলছে লড়াই। প্রত্যেক বছর গ্রামের উন্নয়নের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদকে টাকা দেয় পঞ্চদশ অর্থকমিশন।

    মার্চের মধ্যে সেই টাকা খয়চ করতে না পারলে টাকা ফেরত দিতে হয়। কিন্তু এ বছর শালবনি ৯৯.৭৩, কেশপুর ৯৯.২৫ শতাংশ টাকা খরচ করেছে। গড়বেতা ৩ ৯৮.৬৪ ও গড়বেতা ২ ব্লক ৯৮.৪৪ টাকা খরচ করছে।

    এক সময়ে কেশপুর রাজনীতির লড়াইয়ে অগ্নিগর্ভ হওয়ার কারণে প্রতিদিন খবরের শিরোনামে থাকত। গুলি–বারুদের গন্ধে ঘুম ভাঙতো শিশুদের। এখন তারাই উন্নয়নের নিরিখে প্রথম হওয়ার লড়াইয়ে টক্কর দিচ্ছে একে অপরকে। গত শুক্রবার কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতি জেলার মধ্যে প্রথম ছিল। শালবনি পঞ্চায়েত সমিতি ছিল ষষ্ঠ, সেখানে গত সোমবারের রিপোর্টের নিরিখে শালবনি প্রথমে চলে গিয়েছে।

    কেশপুর হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয়। কেশপুরের বিডিও কৌশিক রায় বলেন, ‘পয়েন্টের সামান্য ব্যবধান রয়েছে। না হলে কেশপুর এখন উন্নয়নের নিরিখে অনেক এগিয়ে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্লক পুরষ্কারও পেয়েছে। আশা করি আরও পুরষ্কার আসবে। পঞ্চায়েত স্তর থেকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করা গিয়েছে বলে সাফল্য মিলেছে।’

    শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিং বলেন, ‘প্রতিটি কাজের অগ্রগতি নিয়ম করে দেখার পাশাপাশি সকলকে নিয়ে বৈঠক করে সমন্বয়ে জোর দেওয়ার জন্যই কাজ করা গিয়েছে। ফলে মার্কেট কমপ্লেক্স থেকে পানীয় জল প্রকল্প, রাস্তা সব হচ্ছে। তাই আর টাকা ফেরত যাচ্ছে না। কাজ হচ্ছে।’

    চলতি অর্থবর্ষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে কারা কত টাকা খরচ করতে পেরেছে? বছর শেষ হতে বাকি মাত্র ৫ দিন। তার আগে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিগত দু’টি অর্থবর্ষের নিরিখে এ বার পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরই এই প্রকল্পে ভালো টাকা খরচ করতে পেরেছে। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবর্ষে জেলার ২০৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে প্রায় ১৭৪ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিল।

    ৯১.২৯ শতাংশ অর্থই খরচ হয়ে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে মাত্র সাড়ে ২৬ লক্ষ টাকার মতো। এই কয়েক দিনে সেই টাকাও খরচ হয়ে যেতে পারে। আর জেলার ২১টি পঞ্চায়েত সমিতি টাকা পেয়েছিল ৪২ কোটি ৪ লক্ষের মতো। ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ৯২ শতাংশ। আর মাত্র ১৩ লক্ষ টাকা রয়েছে। যা এই আর্থিক বর্ষেই খরচ হয়ে যাবে বলে প্রশাস‌নের আশা।

    তবে জেলা পরিষদ আশানুরূপ খরচ করতে পারেনি। জেলা পরিষদের প্রাপ্ত অর্থ ছিল ৭১ কোটি ৪০ লক্ষের মতো। কিন্তু খরচ করেছে প্রায় ৬৯ শতাংশ। তবে সেটিও বিগত দু’বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে গ্রাম পঞ্চায়েত খরচ করতে পেরেছিল ৭৯.৪৩ শতাংশ, পঞ্চায়েত সমিতি খরচ করতে পেরেছিল ৬৫.২৪ শতাংশ, আর জেলা পরিষদ খরচ করতে পেরেছিল মাত্র ৪১.৯১ শতাংশ।

    ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে গ্রাম পঞ্চায়েত খরচ করেছিল ৬৮.৬২ শতাংশ, পঞ্চায়েত সমিতি খরচ করেছিল ৬৯.২০ শতাংশ এবং জেলা পরিষদ করেছিল ৪৭.৫০ শতাংশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করা, সমন্বয় রেখে চলা ও উন্নয়ন না করতে পারলে টাকা ফিরে যাবে এটা বুঝিয়ে আমরা সুফল পেয়েছি।’

    জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভারানি মাইতি ও দলনেতা মহম্মদ রফিক বলেন, ‘পঞ্চায়েতের উন্নয়নে গতি আনতে শুধু জেলাতে নয়, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েও বৈঠক করা হয়েছে। তার জেরেই এই সাফল্য।’

  • Link to this news (এই সময়)