এই সময়, মালদা: গ্রামের যাতায়াতের পথ দুর্গম। গোটা গ্রামে দিনমজুরের সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ পুরুষই পরিযায়ী শ্রমিক। বাড়ির মহিলাদের সন্তান মানুষের পাশাপাশি সংসারের দায় দায়িত্ব সামলাতে হয়। অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে গ্রামের অনেকেই তুকতাক এবং মন্ত্রপূত ওষুধের উপর নির্ভর করেন। তাই ইংরেজবাজার ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামকে দত্তক নিল মালদা মেডিক্যাল কলেজ। সংশ্লিষ্ট গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবারের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত সবরকম সহযোগিতা এবং পুষ্টি যোগানোর ক্ষেত্রে পরামর্শ ও সাহায্য করবেন মালদা মেডিক্যালের চিকিৎসক–পড়ুয়ারা।
বৃহস্পতিবার একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর গ্রামকে দত্তক নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের গাইডলাইন মেনে প্রতিবছর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়ারা একটি গ্রামকে দত্তক নেন। সেইমতো লক্ষ্মীপুর গ্রামের প্রতিটি পরিবারের দায়িত্বে একজন করে চিকিৎসক পড়ুয়া থাকবেন। রুটিন করে তাঁরা প্রতিটি পরিবারের গিয়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর রাখবেন। ওই পরিবারের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবেন পড়ুয়ারা।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রামে অসুস্থ হলে কেউ গাড়ি ভাড়া দিয়ে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসার জন্য আসতে চান না। জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটেব্যথার মতো রোগে আক্রান্ত হলে ওঝা-গুণিনের দ্বারস্থ হন গ্রামবাসীদের একাংশ। সেইসব দিক খতিয়ে দেখেই লক্ষীপুর গ্রামকে দত্তক নেওয়া হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই দত্তক নেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়ম করে প্রতি মাসে অন্তত দু’বার সংশ্লিষ্ট গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা পড়ুয়ারা শিবির করবেন। এ ছাড়া সপ্তাহে অন্তত একদিন নিয়ম করে চিকিৎসক পড়ুয়াদের দু’ থেকে তিনজনের একটি টিম গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের শারীরিক সমস্যার বিষয় খোঁজখবর নেবেন। লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা সবিতা মণ্ডল, ছায়া মণ্ডল, রোজি খাতুনেরা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে চিকিৎসক আসবেন, বাড়ি বাড়ি অসুস্থ মানুষের খোঁজ নেবেন, এটা খুব আনন্দের বিষয়।
শহরে প্রাইভেট ডাক্তার দেখাতে গেলে মোটা টাকা খরচ করতে হয়। মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে প্রতিদিনই প্রচুর ভিড় হয়। কিন্তু ওই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই আমাদের গ্রামের মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন। এটা খুবই খুশির খবর।’ কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান মধুবন্তী কর্মকার বলেন, ‘এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। গ্রামে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়াদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’