এই সময়, উলুবেড়িয়া: সামনেই ইদ। তার আগে রাস্তার ধারে পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন ওঁরা। দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে নেমে হাও়ডার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে উলুবেড়িয়ার দিকে যাওয়ার পথেই পড়ে ডোমজুড়ের নিব়ডা। পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। তার দু’ধারে গজিয়ে উঠেছে অনেক অস্থায়ী দোকান। প্রতিটি দোকানের সামনেই ঝুলছে হরেক রকমের পাঞ্জাবি। এলাকায় বড় বড় পাঞ্জাবির দোকানও রয়েছে।
তাঁরা মূলত পাইকারি ব্যবসায়ী। ইদের আগে মনের মতো পাঞ্জাবি কিনতে সেই সব দোকানে ভিড় করছেন মানুষ। আশপাশের বাসিন্দারা ছা়ডাও দূরের জেলা থেকেও মানুষজন এখানে পাঞ্জাবি কিনতে আসছেন। ক্রেতাদের নজর কাড়তে প্রতিটি দোকানের সামনে পাঞ্জাবি ঝুলিয়ে রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রত্যেকটা পাঞ্জাবির একেক রকম ডিজাইন। তাদের নামও আলাদা। খাদি, মটকা আর্দি–সহ বিভিন্ন স্টাইলের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে নিবড়া বাজারে। তবে এ বছর ইদের ফ্যাশন হিসাবে বেশি চাহিদা রয়েছে হ্যান্ড কাটিংয়ের পাকিস্তানি পাঞ্জাবি এবং টিকলিচিকন পাঞ্জাবি। মহিলাদের জন্য রয়েছে পাকিস্তানি সালোয়ার সুট, প্লাজা, গারারা ও সারারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গোটা দেশকে বছরের পর বছর পাঞ্জাবির জোগান দিয়ে আসছে নিবড়া। এখানকার পাঞ্জাবি বিদেশেও রপ্তানি হয়। মহানায়ক উত্তম কুমার, গায়ক অমৃক সিং অরোরা–সহ অনেক বড় বড় সেলিব্রিটি নিবড়ার পাঞ্জাবি পছন্দ করতেন। টলিউড ও বলিউডের নায়করাও এখানকার পাঞ্জাবি পরেন। ইদানিং মহিলাদের পোশাকেও ভালোই নাম করেছে নিবড়া।
স্থানীয় পোশাক ব্যবসায়ী শামসুজ্জোহা মণ্ডল জানাচ্ছেন, নিব়ডা অঞ্চলে সারা বছরই পাঞ্জাবি বিক্রি হয়। তবে ইদের সময় বিক্রিবাটা আরও বেড়ে যায়। এই বছর ইদে সব থেকে বেশি চাহিদা রয়েছে পাকিস্তানি পাঞ্জাবির। এগুলো সবই হ্যান্ড কাটিং। অর্থাৎ হাতে বানানো। টিকলিচিকন পাঞ্জাবিরও ভালো চাহিদা রয়েছে। মহিলাদের ফেভারিট পাকিস্তানি সালোয়ার সুট, প্লাজা, গারারা, সারারা ড্রেস।’
তিনি জানান, কলকাতার তুলনায় এখানে পাঞ্জাবির দাম কম। তার জন্যই লোকে এখানে ছুটে আসেন। বিভিন্ন দামের পাঞ্জাবি রয়েছে। ভালো মানের পাঞ্জাবি ৪০০–৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর একটু ভালো মানের পাঞ্জাবি এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার ৫–৬ হাজার টাকার দামি পাঞ্জাবিও রয়েছে।
সাহিদ মোল্লা, রহমত আলি মণ্ডলরা জানালেন, নিবড়া এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কেউ পোশাক তৈরি করেন, কারও আবার পোশাকের দোকান রয়েছে। নিবড়ার পোশাক ব্যবসায়ী তথা গার্মেন্টস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের হাওড়া জেলা শাখার সভাপতি শামসুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘নিবড়ার পাঞ্জাবির খ্যাতি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তার কদর আছে। পাঁচ পুরুষ ধরে আমরা এই ব্যবসা করছি। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের পর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো হয়েছে। তাই এখন বাইরে থেকে বেশি খদ্দের আসছে।’
তিনি জানিয়েছেন, আগে পাঞ্জাবির খুব একটা চাহিদা ছিল না। তখন নিবড়ার পোশাক শিল্পীরা ফতুয়া বানাতেন। এখন ফতুয়া কম বিক্রি হয়। তার বদলে পাঞ্জাবিটাই লোকে এখন বেশি পছন্দ করেন। হিন্দু–মুসলিম সব ধর্মের লোক পাঞ্জাবি পরেন। ইদের সময় ছাড়াও ভাইফোঁটা, বিয়ে, অন্নপ্রাশন এবং পুজোর সময় পাঞ্জাবির চাহিদা বেড়ে যায়। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিবড়ায় একটি ‘পাঞ্জাবি হাব’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, পাঞ্জাবি তৈরির জন্য এখন অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি বেরিয়েছে। অন্যান্য রাজ্যে পাঞ্জাবি তৈরির জন্য আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে সরকারি সাহায্য দরকার।
ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ জানিয়েছেন, রাজ্যের যত জায়গায় পাঞ্জাবির বাজার আছে, তার মধ্যে নিবড়া অন্যতম। এখানকার ব্যবসায়ীরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে পারেন তার জন্য পুলিশ প্রশাসন সব সময় সজাগ রয়েছে।