অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু প্রতীক্ষিত বক্তৃতার মাঝেই প্রতিবাদে সরব হন একদল ছাত্র-ছাত্রী। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য পেশ করতেই প্ল্যাকার্ড হাতে তুলে নিতে দেখা যায় SFI UK ইউনিটের সদস্যদের। আরজি কর থেকে শুরু করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ ইস্যু, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-শিল্পের বেহাল অবস্থা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বিদেশের মাটিতে। তিনিও তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে উত্তর দেন সব প্রশ্নের। এই প্রতিবাদকে ‘বামেদের অসভ্যতা’ বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা। সৌগত রায়, কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে দেবাংশু ভট্টাচার্য, সকলেই সরব এ নিয়ে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘SFI-এর ছেলেমেয়েরা বাংলায় একটাও আসন পায় না, লন্ডনে কী করবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে যা বলেছেন, তা একেবারে সত্য।’
দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, ‘CPIM-এর ছাত্র সংগঠন কিছুদিন আগেও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা বন্ধ করতে। সেটা যখন পারল না তখন এই অসভ্যতা করল। এতে কি CPIM শূন্য থেকে একে পৌঁছতে পারবে? বাংলার নজরে CPIM আরও ঘৃণার পাত্র হয়ে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে লন্ডনের উচ্চিংড়েগুলোকে শায়েস্তা করলেন, তাতে জুতো পড়ল বাংলার নেতাদের গালে।’ তৃণমূল নেতা সুদীপ রাহা বলেন, ‘বাংলায় পারেনি। দেশে পারেনি। লন্ডনে পারেনি। ওরা অক্সফোর্ডে গিয়ে দিদিকে থামাতে চাইছে। ওরে, মমতা একটা লড়াইয়ের নাম। এ লড়াই থামানো যায়নি, যায় না, যাবে না। জ্বলে ওঠো দিদি। তুমি বাংলার আগুন। তুমি দেশের আলো।’
মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী কুণাল ঘোষ লিখেছেন, ‘অক্সফোর্ডে বামরামের পরিকল্পিত অসভ্যতা উড়িয়ে ছক্কা হাঁকালেন মমতা। ছ’পিস ছেলেমেয়ে ফেসবুকে প্রচারের জন্য নাটক করতে গিয়েছিল। ভেবেছিল সভা বানচাল হবে। পাবলিক তেড়ে এগিয়ে যেতে তারা কার্যত পালালো। অক্সফোর্ড জানিয়েছে এরা তাদের ছাত্র নয়। বহিরাগত।’
শুরুটা হয়েছিল ঝলমলে ভাবে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেলগ কলেজে পৌঁছন বহু প্রতীক্ষিত বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। বক্তৃতার শুরুটা হয়েছিল সর্বধর্ম সমন্বয় দিয়ে। মাঝে সামাজিক প্রকল্পগুলির সাফল্য সকলের সামনে তুলে ধরছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এর পর তিনি বাংলায় বিনিয়োগ প্রসঙ্গ তুলতেই তাল কাটে সভার। মুখ্যমন্ত্রীকে আরজি কর কাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন শুরু করেন দর্শকাসনে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের দল। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ম্যাম, আরজি করের বিষয়টা কী হল?’ জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনি জানেন, মামলাটি বিচারাধীন এবং এটা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে নিয়েছে, এটা আর আমাদের কাছে নেই। দয়া করে এখানে রাজনীতি করবেন না, এটা রাজনীতি করার জায়গা নয়। সেটা আপনারা আমার সঙ্গে আমার রাজ্যে করতে পারেন।’ ছাত্রছাত্রীরা বলে ওঠেন, ‘আমরা যখন কলকাতায় গিয়ে এই প্রশ্ন করি, আপনার মন্ত্রী আঙুল ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।’ মমতা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’
হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ উঠতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবার জন্য, আমি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, সকলের ঐক্যের পক্ষে, আপনারা নন। কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের কথা বলবেন না, সব ধর্মের কথা একসঙ্গে বলুন। আপনাদের নেতারা যখন আসবেন, তখন কিন্তু একই জিনিস হতে পারে। এটা মনে রাখবেন।’ প্রতিবাদীদের বাম এবং অতিবাম তকমা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে সেই শক্তি দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দেন। দিদি কাউকে গ্রাহ্য করে না। দিদি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো কাজ করে। আমাকে ধরতে পারলে ধরুন, কিন্তু আমার সঙ্গে লড়তে আসবেন না।’ এর পরেই গো ব্যাক স্লোগান ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
SFI-এর UK শাখা সোস্যাল মিডিয়ায় লিখেছে, ‘স্টুডেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া-ইউনাইটেড কিংডম আজ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার সময় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তিনি যে মিথ্যাগুলো বলে যাচ্ছিলেন, আমরা প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করি। উনি পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক উন্নয়নের যে দাবিগুলো করছিলেন, আমরা তার প্রমাণ চাই। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশ করতে দেওয়ার পরিবর্তে, পুলিশ ডাকা হয়।’
SFI নেতা ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘অক্সফোর্ডে গিয়ে মিথ্যাভাষণ দেবেন, আর SFI চুপ করে শুনবে? তা হয় না। আরজি করে নির্ভয়ার যন্ত্রণা আমাদের সকলের আছে। তাই প্রশ্ন হয়েছে। ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র, বাংলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পের দুরাবস্থা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওঁর বাহিনীকে SFI প্রশ্ন করবেই। থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে কথা হবেই।’
বাম নেত্রী দীপ্সিতা ধর বলেন, ‘অক্সফোর্ডে অপমান নামে যাত্রা পালা শেষ হয়ে গেলে একটু মোথাবাড়ি নিয়ে কথা বলুন না। গত দু’দিন ধরে সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ, ওদিকে আপনি মর্নিং ওয়াকের ভিডিয়ো দিচ্ছেন। আপনি তো আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, নাকি?’