দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেন, একটু সচেতনতা বাড়ালেই সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার হলেও সচেতনতার অভাবে কোটি কোটি টাকার সাইবার প্রতারণা চলছে দেশভর। তবে ব্যতিক্রমী সচেতনতার পরিচয় দিলেন জলপাইগুড়ি শহরের এক চিকিৎসক।
শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের মধ্যে পিনাকী সরকার একজন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকায় জেলা এবং আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর রোগী তাঁর কাছে আসেন। বুধবার সকালে অন্যান্য দিনের মতো চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক। সেই সময়ে এক ব্যক্তি নিজেকে একটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসকের মোবাইলে ফোন করে জানান, ভুল করে অনলাইনের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন।
পিনাকী যেন ওই টাকা অনলাইনের মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার পিনাকী বলেন, ‘ওই ফোন আসার পরেই সাইবার প্রতারণার একাধিক ঘটনা মনে পড়ে যায়। সংবাদ মাধ্যমেই জানতে পেরেছিলাম এ ভাবে কারও অ্যাকাউন্টে প্রথমে সামান্য টাকা পাঠিয়ে পরে সেই টাকা ফেরতের নামে প্রতারণা করা হয়। ফলে অনলাইনে পেমেন্ট না করে ওই ব্যক্তিকে সরাসরি ক্যাশে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলি। তিনি তাতে রাজি না হয়ে এক আত্মীয়কে টাকা পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁর আত্মীয়কেও তো আমি চিনি না! সে কারণে আমার চেম্বারে কোম্পানির যে প্রতিনিধিরা আসেন, তাঁদের মাধ্যমে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর থেকে ওই ব্যক্তি আর ফোন করেনি। এমনকী পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বরে পুনরায় ডায়াল করলে ওপ্রান্ত থেকে ফোন তোলা হয়নি।’
চিকিৎসক জানান, ‘মোবাইল নম্বর দিয়ে সাইবার দুষ্কৃতীদের টাকা হাতানোর একাধিক ঘটনার খবর সামনে এসেছে। তার ওপর ওই ব্যক্তি ফোন না তোলায় সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। ফলে বিষয়টি স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে লিখিত আকারে জলপাইগুড়ি সাইবার থানায় জানাই।’
অভিযোগ পাওয়ার পরে থানা থেকেও অনলাইনে টাকা ফেরত না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। এ দিকে, অনলাইনে টাকা পাঠানোর ফলে ওই ব্যক্তির নামও জানা যায়। সে কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির জলপাইগুড়ির মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন পিনাকী। কিন্তু দেখা যায়, কেউ এই ব্যক্তিকে চেনেন না। ফলে টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি।
কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে। আচমকা ওই ওষুধ কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মীরা চেম্বারে এসে জানান, তাঁদেরই এক কর্মী অন্য একজনকে টাকা পাঠাতে গিয়ে ভুল করে চিকিৎসকের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে চিকিৎসক চেকের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেন।