প্রশান্ত পাল, পুরুলিয়া
জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেই পড়ে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকা। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ— তিন স্তরেই পড়ে রয়েছে ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষের টাকা। খরচের বিচারে পঞ্চায়েত সমিতি তুলনামূলক ভাবে এগিয়ে থাকলেও জেলা পরিষদের হাল খুব খারাপ।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে হাতে সপ্তাহ দুয়েক সময়ও নেই, অথচ হিসেব অনুযায়ী, ১০ মার্চ পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থের মাত্র ৫০ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে জেলা পরিষদ। গ্রাম পঞ্চায়েতে খরচের পরিমাণ ৭৩.৭৭ শতাংশ। পঞ্চায়েত সমিতিতে খরচের পরিমাণ ৮৩.৮ শতাংশ। আসন্ন বর্ষার মরশুমের আগে বিভিন্ন ব্লকে রাস্তা থেকে সেতু সংস্কার, বিভিন্ন স্কুলে শৌচাগার সমেত পানীয় জলের ব্যবস্থা সংক্রান্ত যে দাবি রয়েছে, তা আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
জলাভাব এই জেলার চিরকালীন সমস্যা। ঠিক হয়েছিল বর্ষার জল ধরে রাখতে তৈরি হবে চেকড্যাম। কোথাও আবার সৌর পানীয় জল প্রকল্প তৈরির কথা ছিল। কিন্তু জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, বিধি মোতাবেক দরপত্র জমা না–পড়ায় ১৪৩টি প্রকল্পের কাজ কার্যত থমকে গিয়েছে। বরাদ্দ অর্থ ঠিক মতো খরচ না–করতে পারলে ভবিষ্যতে এই জেলার বরাদ্দও কমে যেতে পারে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব পি উলগানাথন।
জানা গিয়েছে, ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে পঞ্চাদশ অর্থ কমিশন থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ১৪২.৬৮ কোটি, পঞ্চায়েত সমিতি ২৯.৯৯ কোটি এবং জেলা পরিষদ ৫০.৬৮ কোটি টাকা পেয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত বরাদ্দ অর্থের মধ্যে খরচ করতে পেরেছে ১০৫.৩২ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত সমিতি ২৯.৯৯ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করেছে ২৫.১৬ কোটি টাকা এবং জেলা পরিষদ খরচ করতে পেরেছে ২৫.৭১ কোটি টাকা।
অর্থ কমিশনের বরাদ্দ অর্থ দিয়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কাজ করার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। বরাদ্দ অর্থের ৫০ শতাংশ খরচ করা যাবে স্যানিটেশন ও পানীয় জলের জন্য, ২৫ শতাংশ রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কারে, বাকি ২৫ শতাংশ এলাকার মানুষজনের চাহিদার ভিত্তিতে উঠে আসা পরিকল্পনায় খরচ করা হয়। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা, বিজেপির সমীর বাউড়ির প্রশ্ন, জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কি এই কাজগুলির চাহিদা নেই? না হলে টাকা পড়ে আছে কেন?
অভিযোগ, জেলা পরিষদের ক্ষমতাসীন সদস্যদের একাংশের সঙ্গে ঠিকাদারদের একটি অংশের অলিখিত বোঝাপড়া রয়েছে। দরপত্র দেওয়ার নিয়ম খাতায়-কলমে বজায় রেখে সদস্যরাই ঠিক করে দেন, কে কোন কাজ পাবে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্যের বক্তব্য, ‘বিধি মোতাবেক দরপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ার আগেই ঠিক হয়ে যায়, কোন ঠিকাদাররা কাজ পাবে। সেই মতো দরপত্র জমা পড়ে। একই ঠিকাদারের হাতে একাধিক কাজ জমে গেলে কাজ তুলতে তা শেষ হতে দেরি হয়ে যায়।’
জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে জেলায় পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ দিতে এসে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল জেলা পরিষদকে। পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং জেলা পরিষদের পদাধিকারী ও সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি মন্ত্রী।
তিনি জানিয়ে দেন, পুরুলিয়া জেলা খরচের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার নীচে রয়েছে। টাকা পড়ে রয়েছে, অথচ খরচ হচ্ছে না! তিনি প্রশ্ন করেন, জেলা পরিষদে পড়ে থাকা টাকা খরচ হয় না কেন? জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন, ‘গোটা বিষয়টি দেখা হচ্ছে। বরাদ্দ অর্থের যাতে সদ্ব্যবহার হয় তা–ও দেখা হচ্ছে।’