• নোটিস এড়ালেও বাড়িতে অর্জুনকে জেরা পুলিশের, জগদ্দলে গুলি কাণ্ডে ধৃত ২
    এই সময় | ২৮ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, জগদ্দল: এক শ্রমিককে জুটমিলের মধ্যে মারপিটের ঘটনাকে ঘিরে বুধবার রাতে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল জগদ্দল মেঘনা মোড় সংলগ্ন এলাকায়। গন্ডগোলের জের ছড়ায় বাইরে। চলে গুলি ও বোমা। গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূল কর্মী। স্থানীয় বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলেন। বুধবার রাত থেকে কড়া পুলিশি টহলদারির মধ্যেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা।

    অন্যদিকে বুধবার রাতের ঘটনার প্রেক্ষিতে অর্জুন সিংকে জেরা করতে চেয়ে বৃহস্পতিবার দু’বার নোটিস দিয়ে তাঁকে তলব করে জগদ্দল থানার পুলিশ। কিন্তু অর্জুন থানায় হাজিরা না দেওয়ায় এ দিন বিকেলে পুলিশ তাঁর বাড়ি গিয়ে তাঁকে জেরা করে।

    গত ২৪ ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহে কয়েক মাস পর ফের উত্তপ্ত জগদ্দল। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। বুধবার রাতে গুলি ও বোমাবাজির ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃত দু’জনকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

    বুধবার রাতের ঘটনার প্রেক্ষিতে অর্জুন সিংকে দু’বার তলব করে জগদ্দল থানা। কিন্তু হাজির হওয়ার বদলে প্রাক্তন সাংসদ পুলিশকে চিঠি দিয়ে যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তবে তাতে আমল না দিয়ে এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ জগদ্দল থানার আইসি মধুসূদন মণ্ডলের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী অর্জুন সিংয়ের বাড়ি মজদুর ভবনে যায়। একতলা থেকে অর্জুন সিংকে ডেকে পাঠালে তিনি নেমে আসেন। এর পর দোতলায় তাঁর অফিসে ঘণ্টা খানেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অর্জুনকে। ভিতরে যখন প্রাক্তন সাংসদকে জেরা চলছে বাইরে তখন মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ছিল র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্সও।

    জিজ্ঞাসাবাদের পর অর্জুন সিং বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমার লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক রয়েছে। আজ পর্যন্ত আমি গুলি চালাইনি। রাত দশটা কুড়িতে একটি গোলমালের খবর শুনতে পাই। বোমা–গুলির আওয়াজে বেরোই। মেঘনা মিলের গেটে যখন পৌঁছই, তখন সেখানে কেউ ছিল না। একটি ছেলে পড়ে ছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি বলি। মেঘনা মিলের গেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করলেই আমার উপস্থিতি ছিল কিনা বোঝা যাবে।’

    প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে মেঘনা জুটমিলের মধ্যে এক শ্রমিককে অর্জুন সিংয়ের লোকজন মারধর করছে খবর পেয়ে পরিবার ও পরিচিত কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করতে মিলের গেটে যেতেই উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, অর্জুন সিং সে সময়ে দলবল নিয়ে বাঁশ, লাঠি, বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলা চালা‍ন। কয়েক রাউন্ড গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুনীতা সিংয়ের ছেলে নমিত সিংয়ের সঙ্গে থাকা মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে মইনুদ্দিন। পায়ে গুলি লাগে তাঁর। মাথাতেও বাঁশ দিয়ে মারা হয় তাঁকে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ভর্তি।

    খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। তাঁর অভিযোগ, ‘অর্জুন সিং গুলি চালিয়েছেন। অবিলম্বে ওঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’ ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) গণেশ বিশ্বাস বুধবার রাতের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করেছেন। তাতে অর্জুন সিংকে নিরাপত্তারক্ষী সমেত দলবল নিয়ে জোরে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। অনেকের হাতে বাঁশ, লাঠি ছিল। যা নিয়ে পুলিশের প্রশ্ন, লাঠি, বাঁশ হাতে দলবল নিয়ে রাতে অর্জুন সিং ওই মিলের গেটে কী করতে গিয়েছিলেন?

    জগদ্দলের পরিস্থিতি নিয়ে ভাটপাড়ায় হাজির হয়ে এ দিন সোমনাথ শ্যামের সঙ্গে বৈঠক করেন স্থানীয় সাংসদ পার্থ ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘শান্ত জগদ্দল, ভাটপাড়াকে নতুন করে অশান্ত করার চক্রান্ত করছে অর্জুন সিং। এই গুন্ডারাজ বন্ধ করবই।’ ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ যুবক বয়ান দিয়েছেন অর্জুন সিংয়ের ছোড়া গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমরা সবদিক তদন্ত করে দেখছি।’

  • Link to this news (এই সময়)