এই সময়, অশোকনগর: ঋণের টাকায় চড়া সুদের ফাঁদে ফেলে কিডনি বিক্রির চক্রে শুধু ধৃত গুরুপদ জানা, বিকাশদের টিম নয়, একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। কিডনি বিক্রি চক্রে ধৃত মূল পান্ডা–সহ তার টিমের সদস্যদের জেরা করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অশোকনগর থানার পুলিশের হাতে।
পুলিশের দাবি, কিডনি বিক্রির প্রতিটি চক্রের কাজের ধরন প্রায় এক। সুদখোর এজেন্টদের সঙ্গে কমবেশি সব চক্রের যোগাযোগও রয়েছে। ক্যানিং থেকে ব্যারাকপুর–সহ হাওড়াতেও অশোকনগরের কায়দাতেই সুদখোর ব্যবসায়ী এজেন্টদের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের চাপ দিয়ে কিডনি বিক্রি করিয়েছিল বলেই জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছে বলেই দাবি তদন্তকারীদের।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছে অমিত, পিয়ালি এবং মৌসুমিরা কিডনি বিক্রির খদ্দের জোগাড় করতে রীতিমতো দালাল রেখেছিল। তারাই কলকাতা–সহ সংলগ্ন এলাকার নেফ্রোলজি সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। সেখান থেকেই দালালরা জানতে পারত কোন রোগীর কিডনির প্রয়োজন।
তাদের রক্তের গ্রুপ কী, সেটাও জানত দালালরা। দালালদের কাছ থেকে পাওয়া সূত্র ধরেই গুরুপদ ওরফে অমিত সুদখোর ব্যবসায়ীদের ময়দানে নামিয়ে দিত। এর পর তথ্য অনুযায়ী বিকাশদের মতো একাধিক চক্রের সুদখোর ব্যবসায়ী চড়া সুদে ঋণের ফাঁদে ফেলে কিডনি বিক্রি করার জন্য চাপ দিত অসহায় মানুষকে। চাপে রাজি হওয়ার পরেই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো অমিতের কাছে।
কিডনি দানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি, আইনি স্বীকারোক্তি দেওয়ার পাশাপাশি কিডনি দাতাদের প্রয়োজনীয় নথি, কোর্টের এফিডেভিট ও একজন চিকিৎসকের ফিট সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। বারাসত মহকুমা এলাকার প্রায় সব কিডনিদাতাকে একজন নেফ্রোলজি চিকিৎসকই এই ফিট সার্টিফিকেট দিতেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই সেই ডাক্তারকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছে অশোকনগর থানার পুলিশ।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত দু’বছরে অশোকনগর এলাকা থেকে ১০ জন কিডনি দানের আবেদন করেছেন। এ ছাড়াও মধ্যমগ্রামের ৬ জন, হাবরার ৫ জন, নিউ টাউন থেকে ২ জন আবেদন করেছিলেন। বারাসত, দেগঙ্গা, দত্তপুকুর, বাগুইআটি এলাকায় একজন করে কিডনি দানের আবেদন করেছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী কিডনি দানের ক্ষেত্রে প্রথমে হয় পুলিশ ভেরিফিকেশন। তার পর হয় মহকুমা স্তরে হেয়ারিং। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় চাপ দিয়ে কিডনি বিক্রির বিষয়টি কেন ধরা পড়ল না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একজন চিকিৎসকই বা কেন বারবার ফিট সার্টিফিকেট দিচ্ছেন? এই বিষয়টিও কী ভাবে স্বাস্থ্যজেলার কর্তাদের নজর এড়িয়ে গেল, এই প্রশ্নটাও ঘুরপাক খাচ্ছে।