• জঙ্গল ও বন্যপ্রাণ বাঁচানোর ডাক দিচ্ছে সাঁওতালি নাটক
    এই সময় | ২৮ মার্চ ২০২৫
  • সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

    নাটকের নাম ‘সাজাও রুওয়াড়াবন লে লেগেচ বির বুরুদ।’ বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, বনজঙ্গলকে পুনরায় সবুজ করে সাজিয়ে তুলব। নতুন এই বার্তা নিয়ে সবুজ বাঁচানোর অভিযান শুরু হয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগের। আর তার হাতিয়ার নাটক।

    বুদ্ধপূর্ণিমার সময়ে শুধু পুরুলিয়া জেলাই নয়, জঙ্গলমহলের সর্বত্রই গভীর জঙ্গলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরার ঐতিহ্য রয়েছে। স্থানীয় ভাষায় এই পরবের নাম সেন্দ্রা। অনেক সময়ে বন্যপ্রাণী শিকারও হয়। গত কয়েক বছর বন দপ্তরের লাগাতার প্রচারে এই প্রবণতা অনেকটা কমেছে। লক্ষ্যণীয় ভাবে বেড়েছে জেলায় বন্যপ্রাণীর সংখ্যা।

    এ বারও সেন্দ্রার আগে থেকেই অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপ সমেত বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয়েছে প্রচার। তার মূল হাতিয়ার নাটক। প্রচারের কাজে বিভিন্ন ক্লাবের সহযোগিতাও নিচ্ছে বন দপ্তর। পুরুলিয়া বনবিভাগের অতিরিক্ত বনাধিকারিক সায়নী নন্দী বলছেন, ‘বন্যপ্রাণ এবং বনভূমিকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণী— দুই–ই বেড়েছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছে।’

    এ বার সেই প্রচারে বড় ভূমিকা নিয়েছে সাঁওতালি মাধ্যমে নাটক। প্রভাতী হেমব্রমের লেখা ‘সাজাও রুওয়াড়াবন লে লেগেচ বির বুরুদ’ নামে একটি নাটকের মাধ্যমে চলছে প্রচার। এই নাটকের মাধ্যমে জঙ্গলে শিকারের বিরোধিতা ছাড়াও সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলে আগুন প্রতিরোধ, জঙ্গল–রক্ষা এবং অরণ্যের ক্ষয় নিয়েও সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে।

    উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অযোধ্যা পঞ্চায়েতের প্রধান চম্পা সিং মুড়ার বক্তব্য, ‘অযোধ্যা পাহাড়ে বুদ্ধপূর্ণিমার দিন ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসেন জনজাতি মানুষজন। আদিবাসীদের মিলনোৎসব হয়। শিকারের সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ কোনও সম্পর্ক নেই। সেই বিষয়টিও প্রচারে নিয়ে আসা হচ্ছে।’

    এলাকার শিক্ষক এবং সমাজসেবী শিবরাম কিসকু বলছেন, ‘অরণ্যের সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক নিবিড়। সুদূর অতীত থেকে তাঁরা–ই জঙ্গলকে রক্ষা করে আসছেন। নতুন প্রজন্মও তাই করবে। সাঁওতালি নাটকে সচেতনতার বার্তা আরও জোরালো করছে জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণ রক্ষার প্রতিজ্ঞাকে।’

    পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে সেন্দ্রার সময়ে অযোধ্যা পাহাড়ে পশু শিকার খুব পরিচিত ঘটনা ছিল। শিকার করা হতো বন্য শুয়োর, হরিণ, ময়ূর ছাড়াও আরও নানা ধরনের প্রাণী। গত কয়েক বছরে পাহাড়ে সেই শিকারের প্রবণতা কমেছে। কিন্তু তার পরেও এখনও বুদ্ধপূর্ণিমার রাতে বহু মানুষ অস্ত্র নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করেন। তাঁদেরও বিভিন্ন ভাবে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে এমন আর না হয়। শিকার নিষিদ্ধ করতে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার। ইতিবাচক ফলও মিলবে বলে নিশ্চিত বনকর্তারা।

  • Link to this news (এই সময়)