এই সময়: অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে বৃহস্পতিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের সময়ে যে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল তার প্রতিবাদে দিল্লি ও কলকাতায় একযোগে প্রতিবাদ জানালো তৃণমূল। শুক্রবার রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও শশী পাঁজার নেতৃত্বে কলকাতায় ধিক্কার মিছিল করে দলের মহিলা শাখা।
আশুতোষ সহ একাধিক কলেজের সামনেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। পাশাপাশি সাংসদ সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্র সহ তৃণমূলের সংসদীয় টিমও এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে। সৌগত বলেন, ‘মমতা ওখানে আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছেন। এই ঘটনায় অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং ব্রিটেনের পুলিশকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্রেফ প্রচার পাওয়ার জন্য ওরা (এসএফআই) এই কাজ করেছে।’
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, ‘রাম-বামের হতাশার বহিঃপ্রকাশ। এদের (এসএফআই) কাজ হচ্ছে কোনও সভা চললে তা ভন্ডুল করা। আক্রমণ করা। ওখানে শৌখিন বিপ্লব না করে দেশে ফিরে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করা উচিত।’ ইউকে’তে মমতা দেশের প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছেন, এটা বোঝার মতো সহনশীলতা বাম ছাত্রদের নেই বলেই ব্রাত্যর মত।
যদিও বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কেলগ কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে শনিবার ভারতীয় সময় রাত ১০টা পর্যন্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কলেজের ওয়েবসাইটে শুক্রবার ‘নিউজ’ সেকশনে ‘সামাজিক উন্নয়ন: বালিকা, শিশু এবং মহিলা ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে ভাষণের সময়ে মমতার বক্তব্যকে ব্যাহত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও শনিবার তাঁর ভাষণের একাংশ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘লড়াই থেকে আমি কখনও সরে আসিনি। আসব না। পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে তা আমি বরদাস্ত করব না।’ সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের ইউকে শাখা অবশ্য বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের এক্স হ্যান্ডলে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, মমতার ‘অসত্য ভাষণে’র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এসএফআইয়ের ইউকে শাখার অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ ভাবে মমতাকে কিছু প্রশ্ন করায় পুলিশ ডেকে তাঁদের সদস্যদের অডিটোরিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
কেলগ কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নিখিল ম্যাথিউ-র নেতৃত্বাধীন এসএফআই (ইউকে)। শুক্রবার রাতে নিখিল, আশ্বতি অশোকের নেতৃত্বেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইউকে-র বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত এসএফআই সদস্যরা বিক্ষোভ দেখান। মূলত দক্ষিণ ভারতীয় সদস্যরা এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। সূত্রের খবর, নিখিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। যে সময়ে ঐশী ঘোষ জেএনইউ–তে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেদিন নিখিলের ওপরেও হামলা চালানো হয়।
শুক্রবার রাতের ঘটনা নিয়ে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন,‘অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কেলগ কলেজে গিয়ে মিথ্যা ভাষণ দেবেন, এসএফআই চুপ থাকবে না। ২০১৮ সালে মোদীর সফরের সময়েও কাঠুয়ার ধর্ষণ নিয়ে বামপন্থীরা ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রতিবাদ করেছিল। তাই রাজ্যের শিল্প, শিক্ষা নিয়ে ইংল্যান্ড হোক অথবা ইংলিশবাজার, আমরা প্রশ্ন করবই।’
এসএফআই(ইউকে) শাখার পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের কয়েকজন শ্রোতাও ভাষণের সময়ে মমতাকে ধর্মীয় প্রশ্ন করেন। কিন্তু এঁরা অক্সফোর্ড অথবা ইউকে’র কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নন বলে অডিটোরিয়ামে উপস্থিত ভারতীয় শ্রোতাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ।
যদিও শুক্রবারের বিশৃঙ্খলা নিয়ে সুকান্ত মজুমদার, শমীক ভট্টাচার্য কারও বক্তব্য এক সুরে নয়। শমীকের বক্তব্য, ‘বিদেশে যখন কোনও ভারতীয় মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন সেই সময়ে তাঁকে প্রশ্ন করে বাধা দেওয়াটা শিষ্টাচার বিরোধী।’ আর সুকান্তর বক্তব্য, ‘আরজিকর নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়া স্বাভাবিক। ওই ঘটনার তথ্য প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্তকে পানিহাটির চেয়ারম্যান করেছেন তিনি। বাঙালি চুপ করে থাকবে?’
কেলগ কলেজে আরজি কর প্রসঙ্গ ওঠায় নির্যাতিতার বাবাও এ দিন কলকাতায় বলেন, ‘উনি যেখানে যাবেন, সেখানেই এমন প্রতিবাদের মুখে পড়তে হবে। যতদিন না বিচার দেবেন ততদিন ওঁর নিস্তার নেই।’
আরজি করের পাশাপাশি কেলগের অডিটোরিয়ামে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে কেন শুধু সংখ্যালঘুদের উল্লেখ রয়েছে, এই প্রশ্ন করেছিলেন। তা নিয়ে অবশ্য আপত্তি নেই শমীকের। এ প্রসঙ্গে মহুয়া মৈত্র এদিন দিল্লিতে বলেন, ‘বিজেপির তো প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরাও অক্সফোর্ডে যান, হিন্দুদের কথা বলুন। বিজেপিকে বলতে হবে না মমতা অক্সফোর্ডে গিয়ে কী বলবেন। তিনি জানেন কী বলতে হয়।’
প্রত্যাশিত ভাবেই এসএফআই(ইউকে) শাখার পাশে দাঁড়িয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তো শুধু মিথ্যা কথা বলেছেন। এসএফআই প্রশ্ন তো করবেই। খড়্গপুরে টাটাদের বিনিয়োগ উনি ক্ষমতায় আসার আগে হয়েছে। এসএফআই মোদীর বিরুদ্ধেও সরব হয়।’
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সমর্থন করলেও কেলগ কলেজে মমতার ভাষণের সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গে বসেই করা হয়েছে বলে তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ। এমন কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জোড়াফুল শিবিরের দাবি। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা পরিকল্পনাও করেছে তৃণমূল।
এ দিকে মমতার ভাষণ শুনতে বৃহস্পতিবার কয়েকজন প্রবাসী বাঙালিও হাজির ছিলেন। পার্থ মণ্ডল নামে এক প্রবাসী শনিবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনুষ্ঠানের শেষ দিকে শিল্পপতি করণ বিলিমোরিয়া ওঁকে বললেন, ভারত এখন বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ২০৬০ সাল নাগাদ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে। এখানে উনি (মমতা) বললেন, আমি সহমত নই। কেন সহমত নন, তার বস্তুনিষ্ঠ উত্তর আশা করেছিলাম।’ পার্থর এই পোস্ট ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।