এবার জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনও জাল! রাজ্যগুলিকে সতর্ক করল কেন্দ্র
বর্তমান | ২৯ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জাল হচ্ছে জলাতঙ্কের টিকাও! শুক্রবার খাস দিল্লির ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে এই কথা জানিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হল সেখানকার ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিটেইল ডিস্ট্রিবিউশন কেমিস্ট অ্যালায়েন্সকে (আরডিসিএ)। দিল্লি ড্রাগ কন্ট্রোলের অন্যতম কর্তা কে আর চাওলা ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, দেশের ওষুধ সংক্রান্ত বিষয়ের মাথা কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল তাদের এই জরুরি বার্তা দিয়ে সতর্ক করেছে। জানানো হয়েছে, দিল্লি, মুম্বই, আমেদাবাদ ও লখনউতে ছড়িয়ে পড়েছে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড থেকে জাল করা জলাতঙ্কের ইঞ্জেকশন (ব্যাচ নম্বর কেএ২৪০১৪)। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলের প্রথম সারির আধিকারিক এবং ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সর্বভারতীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও এই সংক্রান্ত নোটিসটির মাধ্যমে সব রাজ্যের প্রতিনিধিদের সতর্ক করা হয়েছে। সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, মূল ওষুধের জায়গায় ভেজাল তো আছেই। এমনকী, জলাতঙ্কের টিকা পাঠানোর ক্ষেত্রে অপরিহার্য শর্ত, অর্থাৎ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ইঞ্জেকশন সংরক্ষণ বা কোল্ড চেইনও (২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বজায় রাখা হচ্ছে না। ফলে মানুষ ওই জাল ইঞ্জেকশন নিলে বড়সড় বিপদ হতে পারে।
জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ১০০ শতাংশ। কিছুদিন ধরেই রাজ্যজুড়ে সরকারি হাসপাতালে এর টিকা অমিল থাকায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছিল। বহু জায়গায় এখনও সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনি। বাইরে থেকে প্রায় ৪০০ টাকা খরচ করে ইঞ্জেকশন কিনতেও হয়েছে। এরইমধ্যে দেশের নানা প্রান্তে এই টিকার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড জালের খবর আসায় মাথায় হাত পড়েছে স্বাস্থ্যভবনের। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন অফিসাররা। সরকারি ওষুধ সরবরাহের প্রধান জায়গা, অর্থাৎ সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের অধিকর্তাকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
একদিকে সতর্কবার্তা, অন্যদিকে অভিযান। জাল ওষুধ চক্রের শিকড় পর্যন্ত পৌঁছতে এটাই এখন রোজনামচা। কয়েকদিন আগেই মেহতা বিল্ডিং, গান্ধী ও বাগড়ি মার্কেটের অভিযানে পেট খারাপের একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তারই সূত্র ধরে এদিন কেষ্টপুরে এক পাইকারী ব্যবসায়ীর গোডাউনে হানা দেন ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরা। অভিযোগ, পেট খারাপের ওষুধটি আগেই সরিয়ে ফেলেছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু, তাঁর সেল ও পারচেজ বিল বাজেয়াপ্ত করেছেন ড্রাগ ইনসপেক্টররা। সেখান থেকে এদিন আবার আটক হয়েছে ইউরিনে সংক্রমণ এবং গ্যাসের চিকিৎসার সন্দেহজনক ওষুধ। সেগুলি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। আমতা কাণ্ডে ধৃত বাবলু মান্নার কেসের সূত্র ধরেও শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও ৩ লক্ষ টাকার ভেজাল ওষুধ। ফলে বাজেয়াপ্ত জাল ওষুধের পরিমাণ টাকার অঙ্কে এখন প্রায় ২৮ লক্ষ। এর বাইরে অবশ্য রয়েছে সিংভাগটাই। মানে, যা এখনও উদ্ধার হয়নি। জটিল এই পরিস্থিতিতেই ওষুধের গুণমান বজায় রাখা নিয়ে শনিবার কলকাতায় কর্মশালায় আসছেন কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের পদস্থ কর্তারা। থাকবেন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল এবং দেশের ওষুধ নির্মাতাদের সংগঠন ইডমার শীর্ষ পদাধিকারীরাও। জাল ওষুধ যে এখানে একটা বড় অংশ দখল করবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।