• মার্চ শেষেই বাতাসে লু ভাব, দুপুরের পর রাস্তা ফাঁকা
    বর্তমান | ২৯ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এতদিন গরম ছিল, রোদের তেজ ছিল ঠিকই। কিন্তু শুক্রবার কলকাতায় হাওয়ায় বয়ে এল গরম। যেন লু। শহরের মানুষ বলছে, ‘এখনই এই! সামনের কয়েক মাস আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে কে জানে?’ বেলা ১২টা বাজতে না বাজতেই ধর্মতলা যেন কর্মখালি। বাসে যাত্রী নেই বললেই চলে। মেট্রো এসি বলে ভিড় বেশি। এদিন দুপুর থেকে আবার কানাঘুষো ভূমিকম্প নিয়ে। সেই উত্তেজনা মার্চ শেষের উত্তাপ এক ধাপ দিল বাড়িয়ে। আচমকা বেড়ে গেল লস্যি-কোল্ড ড্রিঙ্ক-আইসক্রিমের বিক্রি।

    আলিপুর হাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এদিন সকালের দিকে শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার সন্ধ্যার বুলেটিনে তা বেড়ে হয়ে গিয়েছে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ২.৯ ডিগ্রি বেশি। আর ফোনের পর্দায় ‘ফিলস লাইক’ দেখাচ্ছে ৪০ ডিগ্রি। দমদমে যদিও ‘ফিলস লাইক’এর কোনও বালাই নেই। সেখানকার তাপমাত্রা এদিন বাস্তবিকই ৪০ ডিগ্রি। আর ডায়মন্ডহারবার ৩৯.৫, সল্টলেক ৩৯.৭, ক্যানিং ৩৮.৪, বারাকপুর ৩৯.৪, উলুবেড়িয়া ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একটু স্বস্তির ছবি দীঘা ও সাগরের। সেখানকার তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবথেকে বেশি গরম ছিল পানাগড়ে। ৪১.৪ ডিগ্রি উত্তাপ পেয়েছে পানাগড়। 

    কে বলবে এখন মার্চ মাস! এখনই মানুষের চোখে সানগ্লাস। রোদ ঢাকতে মাথায় ফেট্টি। মুখও ঢেকে অনেকে। সরকারিভাবে লু বয়ে যাওয়ার কোনও ঘোষণা নেই। তবে ‘লু লাইক’ গরম হাওয়ার ছেঁকা রীতিমতো টের পেয়েছে মানুষ। দুপুরে ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে প্রায় ফাঁকা বাস। কনডাক্টর বলেন, ‘প্যাসেঞ্জারদের ডাকতেও ক্লান্ত লাগছে। রাস্তায় তো লোকজনই নেই। বাস চালিয়ে কি করব?’ যেখানেই এক চিলতে ছায়া পেয়েছে সেটিই আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে পথচলতিরা। ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির পার্কে বসে বেলঘরিয়ার সৌমেন্দু পাল। বললেন, ‘ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়। কোথাও বসে খাব, সে ছায়াটুকুও পাচ্ছিলাম না। এখানে একটু ছায়া পেয়ে বসলাম।’ ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহের বাসে উঠে আসনে বসতে গিয়ে লাফিয়ে উঠলেন একজন। বললেন, ‘বাসের ভিতরে তো রোদ নেই। কিন্তু সিট দেখুন আগুন হয়ে আছে। রডও তেতে আগুন। ধরাই যাচ্ছে না।’ 

    এদিন শুধু অন্য ছবি মেট্রোর। ভিড় বেড়েই গিয়েছে। কয়েকজনের বক্তব্য, ‘এসি বাসে তো খরচ বেশি। তার উপর ঠান্ডা কম। সেদিক থেকে মেট্রোয় তোফা ঠান্ডা।’ অনেকে আবার মেট্রোর ঠান্ডা থেকে বেরিয়ে রোদে রাস্তায় পা দিয়েই গেলেন চটে। লহমায় ধরে গেল মাথা। গলা শুকিয়ে কাঠ। বিরক্তির একশেষ। রাস্তায় ঠান্ডা লেবু-জল, লস্যি, ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক দেওয়া চলল দিনভর। দিনের শেষে নিয়মমাফিকই অস্ত গেল সূর্য। কিন্তু অস্বস্তি কমল না মোটেও। সন্ধ্যার দিকেও গরম হাওয়া। রাত পর্যন্ত তা নাজেহাল করে রাখল শহর-শহরতলিকে।
  • Link to this news (বর্তমান)