• স্কুলে সালোয়ার কামিজ! চুল কেটে ‘শায়েস্তা’, শিক্ষিকাকে ক্লাসে ফেরাতে নির্দেশ কোর্টের
    এই সময় | ২৯ মার্চ ২০২৫
  • স্কুলে সালোয়ার পরে যাওয়ায় এক শিক্ষিকাকে মারধর করে চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ! শেষে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ওই শিক্ষিকা। সাত বছর ধরে চলে ট্রিটমেন্ট। এরপর সুস্থ হয়েও তিনি স্কুলে ঢুকতে পারেননি। হাইকোর্টে মামলা করেন তারপরেও একের পর এক এজলাস ঘুরে পাঁচ বছর কেটে যায়।

    শুক্রবার মামলাটি ওঠে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। এ দিন রাজ্য বা স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ ছিলেন না। তাতে অবশ্য পিছিয়ে না গিয়ে বিচারপতি জানিয়ে দেন, একজন মহিলা বছরের পর বছর দরজায় দরজায় ঘুরবেন, তা হতে পারে না। সালোয়ার কোনও অংশেই অশোভন পোশাক নয়। তাই বিচারপতি চট্টোপাধ্যায়ের জেলা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ওই শিক্ষিকা যাতে স্কুলে ঢুকে সুস্থ ভাবে ক্লাস করাতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর মহেশপুর প্রফুল্ল বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে ২০১০ সালে যোগ দেন মধুরিমা দাস। গোড়া থেকেই কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাড়ি থেকে অটো, ট্রেন, বাসে চড়ে স্কুলে যেতেন। পরতেন সালোয়ার। তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় স্কুলে। স্কুলের শিক্ষিকাদের একাংশ ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের একাংশ কার্যত ফতোয়া জারি করেন, চাকরি করতে হলে পরতে হবে শাড়ি। সালোয়ারে স্কুলে ঢোকা যাবে না।

    অভিযোগ, গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশেকে লেলিয়ে দেওয়া হয় ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। কিন্তু মধুরিমার আবেদন ছিল, যেহেতু তাঁকে বাঁশদ্রোণী থেকে বাসন্তী বাসে–ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়, তাই প্রতিদিন স্কুলে শাড়ি পরে আসা সম্ভব নয়। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।

    স্কুলের পরিচালন কমিটির একাংশ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয়, যে একদিন অভিভাবকদের একাংশ ও বেশ কিছু শিক্ষিকা তাঁকে চরম হেনস্থা করেন। মারধর করে চুল কেটে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। অসুস্থ হয়ে পড়েন মধুরিমা। বাসন্তী থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

    এর পর থেকেই মধুরিমা মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। তারপরেও স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে আর ঢুকতেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন তিনি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করান। ওদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর বেতন বন্ধ করে দেন। তবে অনুপস্থিতির জন্য স্কুল কোনও পদক্ষেপও করেনি। প্রায় সাত বছরের চিকিৎসার পরে ফিট সার্টিফিকেট পান মধুরিমা। এরপর বিষয়টি শিক্ষা দপ্তরকে জানিয়ে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

    প্রায় পাঁচ বছর হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাসে তাঁর মামলা ঘুরতে থাকে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার মামলাটি ওঠে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। শিক্ষিকার আইনজীবী আশিস চৌধুরী বলেন, ‘কোনও শিক্ষিকা কী পোশাক পরবেন, তা নিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ফতোয়া জারি করতে পারে না। অথচ এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’

    মধুরিমার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখিয়ে দাবি করেন, ‘মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে কোনও শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে, তাঁর অনুপস্থিতি গ্রাহ্য হয় না।’ আদালত তাঁর যুক্তিতে মান্যতা দিয়ে জানিয়েছে, স্কুলে মধুরিমাকে ফেরানোর জন্য পদক্ষেপ করতে হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শককে।

  • Link to this news (এই সময়)