সুশান্ত বণিক, আসানসোল
আতঙ্কের নাম স্যাম্পেল ওষুধ। সেই ওষুধের রমরমায় নাভিশ্বাস উঠেছে আসানসোলের ওষুধের ব্যবসায়। এক দিকে যেমন ফাঁকি পড়ছে সরকারের রাজস্বে, অন্য দিকে জাল ওষুধ বিক্রির সম্ভাবনাও প্রকট হচ্ছে।
রয়েছে আরও এক সঙ্কট। স্যাম্পেল ওষুধ কম দামে বাজারে সহজেই মিলে যাচ্ছে বলে সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাজ–কারবার লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। এমনই অভিযোগ করছে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার পক্ষ থেকে জেলা ড্রাগ কন্ট্রোলারের কাছে এই ধরনের ব্যবসায় রাশ টানার দাবি জানানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের অধিকারিকেরা।
আসানসোলের রাহা লেনে ওষুধের বিশাল পাইকারি বাজার রয়েছে। নামী–দামি কোম্পানির ওষুধ সেখানে কেনাবেচা হয়। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকে ওষুধ কেনেন। অভিযোগ, বিভিন্ন কোম্পানির স্যাম্পেল ওষুধে বাজার ছেয়ে গিয়েছে।
বিসিডিএ–র পক্ষ থেকে সম্প্রতি অভিযোগ করা হয়েছে জেলা ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরে। সংগঠনের দুই বর্ধমান জেলার সম্পাদক অমিতাভ রায় অভিযোগ করেন, খোলা বাজারে স্যাম্পেল ওষুধ কেনাবেচার অবৈধ কারবারে ক্রেতা বিক্রেতার পাশাপাশি সরকারেরও ক্ষতি হচ্ছে।
প্রথমত, বিভিন্ন কোম্পানির স্যাম্পেল ওষুধ কেনাবেচার পাকা ক্যাশমেমো দেওয়া হয় না। ফলে ওষুধের ব্যাজ নম্বর, ওষুধ তৈরি ও তার মেয়াদ ফুরোনোর প্রামান্য নথি বা তথ্য ক্রেতার কাছে থাকে না। ফলে স্যাম্পেলের নামে জাল ওষুধ বিক্রি করা হলে তা বোঝা বা ধরার সুযোগ থাকে না।
এ ছাড়াও খোলা বাজারে স্যাম্পেল ওষুধ অনেক কম দামে কেনাবেচা হয়। ওষুধের বাজারে কমবেশি ৪০ শতাংশ বাজার দখল করেছে এই অবৈধ কারবার। এতে সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তা ছাড়াও নিত্যদিন বিপুল পরিমাণ স্যাম্পেল ওষুধ বিক্রি হওয়ায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
সম্প্রতি রাহা লেনে ওষুধের পাইকারি বাজারে গেলেই দেখা যায়, কোথাও রাস্তার উপরে গুমটি দোকানে, কোথাও বা আবার গলির মধ্যে দোকান খুলে স্যাম্পেল ওষুধের কারবার চলছে। স্থানীয় পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত রায় বলছিলেন, ‘স্যাম্পেল ওষুধের কারবারে আমাদের তো সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা।’
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে আসছে এই স্যাম্পেল ওষুধ? ব্যবসায়ীদের দাবি, বিভিন্ন কোম্পানির বিপণন কর্মীদের মাধ্যমে এ সব ওষুধ বাজারে আসছে। একটি বিপণন কর্মী সংগঠনের জনৈক নেতার দাবি, বাজারে যে পরিমাণ স্যাম্পেল ওষুধের বিক্রি হয়, তার ১০ ভাগের একভাগ ওষুধ বিপণন কর্মীরা কোম্পানি থেকে পান না। সেই ওষুধ অবৈধ ভাবে বাজার আসছে। তাঁরাও এর তদন্ত চেয়েছেন।
জেলা ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মানস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘আসানসোলের ওই বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাই। এই অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ করা হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’ ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের খবর, জেলায় এখন মোট ছ’জন পরিদর্শক আছেন। তাঁরা নিত্য বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে ধড়পাকড় করছেন।