এই সময়, লাটাগুড়ি: লোকালয়ে চলে আসা ছোট–বড় বন্যপ্রাণকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় লাটাগুড়ির গোরুমারার ইকো ট্যুরিজ়ম রেঞ্জের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। তবে দিন দিন যে ভাবে এই রেঞ্জের পরিকাঠামো ভেঙে পড়ছে তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পরিবেশ ও পশুপ্রেমীদের।
উদ্ধার করে প্রাণীদের সেখানে নিয়ে এলেও চিকিৎসা ব্যবস্থা বেহাল। তাই স্থায়ী পশু হাসপাতালের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদারের অভিযোগ, ‘বন্যপ্রাণীর বিচরণ ভূমি ডুয়ার্স। প্রায়শই লোকালয়ে এসে ছোট–বড় প্রাণী জখম হয়। এই রেঞ্জে ছোটখাট বন্যদের রেখে চিকিৎসা করা হলেও হাতি, বাইসন, গন্ডারের মতো বড় প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন।’
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই গোরুমারার ইকো ট্যুরিজ়ম রেঞ্জটি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। এই রেঞ্জ থেকে টিকিট কেটে জিপসি ও গাইড–সহ গোরুমারার জঙ্গলে সাফারির সুযোগ পান পর্যটকরা। কিন্তু বহুদিন ধরে সেখানকার প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের হাল নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। উদ্ধার হওয়া হরিণ, চিতাবাঘ, নানা প্রজাতির পাখি, সাপ–সহ বিভিন্ন সরীসৃপদের রাখা হয় এই রেঞ্জের এনক্লোজ়ারে।
এক সময়ে সেখানে রাখা হতো একাধিক হরিণ ও ময়ূরকে। হরিণ দেখার জন্য পর্যটকদের ভিড় জমে যেত। এখন সেখানে একটিও হরিণ নেই। এমনকী, উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য এনক্লোজ়ারের ভিতরে যে ঘরে রাখা হয় তার চারিদিক ভেঙে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
পাশের জঙ্গল থেকে প্রায়ই অন্য বুনোরা ঢুকে পড়ছে সেখানে। বেশ কয়েকবার রেঞ্জের ভিতর হাতি ঢুকে পড়ার ঘটনাও সামনে এসেছে। গোরুমারার এডিএফও রাজীব দে বলেন, ‘ইকো ট্যুরিজ়ম রেঞ্জ তথা লাটাগুড়ি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি ঢেলে সাজার পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’ এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়টি উপরমহল থেকে অনুমোদন এলে তবেই সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
আগে গোরুমারা ইকো ট্যুরিজ়ম রেঞ্জে একটি মিউজিয়াম ছিল। যেখানে পর্যটকরা সাফারি শেষে বিকেলের পরে কিছুটা সময় কাটাতেন। সেটিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা লাটাগুড়ির রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেবের বক্তব্য, ‘দিনের পর দিন এই রেঞ্জের পরিকাঠামো ভেঙে পড়ছে। বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি না হলে বন্যদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’