• সিঁদুর মাখিয়ে ৪ বছরের শিশুকে বলি দেওয়ার চেষ্টা? গ্রেপ্তার ‘তান্ত্রিক’
    এই সময় | ২৯ মার্চ ২০২৫
  • চার বছরের শিশুকে বলি দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এক যুবকের বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতায়। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত যুবকের নাম রঞ্জিত রুইদাস। তন্ত্রসাধনার নাম করেই অভিযুক্ত যুবক এই কাণ্ড ঘটাতে যাচ্ছিল বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-৩ ব্লকের সারগা গ্রামের এক দম্পতির চার বছরের পুত্র সন্তানের শোনা ও কথা বলার সমস্যা রয়েছে।  বিভিন্ন জায়াগায় তার চিকিৎসাও করানো হচ্ছে পরিবারের তরফে। শনিবার দুপুরে খাওয়ানোর পর শিশুটিকে বাড়ির ভেতরে শুইয়ে রেখেছিলেন তার মা। কিছুক্ষণ পর ছেলেকে বাড়ির ভেতরে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। খুঁজে পেয়ে রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। 

    যেহেতু শিশুটি শুনতে পায় না ও কথা বলতে পারে না, তাই উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবেশীরাও খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। চারিদিকে খোঁজাখুঁজির পর এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ এক প্রতিবেশী দেখতে পান পাশের বাড়ির একটি বন্ধ রুমের জানালাতে বাচ্চাটি বসে আছে, গোটা শরীরে সিঁদুর মাখানো রয়েছে।  তড়িঘড়ি সকলে গিয়ে রঞ্জিত রুইদাস নামে ওই যুবকের বাড়ির দরজা খুলে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করেন।

    শিশুটি কেন তাঁর বাড়িতে রয়েছে, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয় রঞ্জিতকে। সকলের চাপের মুখে রঞ্জিত স্বীকার করে নেন, সেই শিশুটিকে ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। গ্রামবাসীরা তাঁকে মারতে উদ্যত হলে ছুটে পালিয়ে যায় রঞ্জিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসীরা তাঁকে ধরে ফেলে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়ির পুলিশ এসে রঞ্জিত-সহ তার পরিবারের ৫ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। 

    জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রঞ্জিতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত আছে কি না তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। বিডিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ধরনের একটি অভিযোগ এসেছে। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রামের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণে আছে।’ বিশিষ্ট শিক্ষক ও জেলা পরিষদের সদস্য শান্তনু দে বলেন, 'এই যুগেও এই ধরনের ঘটনা ভাবা যায় না! আমরা আরও বেশি করে সচেতনতামূলক প্রচার চালাব এলাকায়।'

    বছর ৪০-র রঞ্জিত একটি কাঠের ডিপোতে কাজ করেন। স্ত্রী, সন্তান-সহ তাঁর পরিবারও আছে। তা সত্ত্বেও কেন এই ঘটনা? উদ্ধার হওয়া শিশুটির বাবা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই ওকে (রঞ্জিতকে) আমাদের সন্দেহ হত। চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা একজনের (রঞ্জন বিশ্বাসের) কাছ থেকে নাকি ও তন্ত্রবিদ্যা শিখছিল। আর তা করতে গিয়েই, আজ এই কাণ্ড! আর দু’মিনিট দেরি হলে হয়তো আমার ছেলেকে আর ফিরে পেতাম না।’ স্থানীয়দের একাংশের দাবি, আজ এমনিতেই অমাবস্যা রয়েছে। সন্ধ্যায় তন্ত্র সাধনার জন্য অভিযুক্ত যুবক এই কাজ করতে পারে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনা ঘিরে এলাকায় যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)