বুদ্ধদেব বেরা
ঘড়ির কাঁটা পৌনে একটা। জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলছে। একটি ঘরে পড়াচ্ছেন প্রধান শিক্ষক দেবাশিস পাল ও পার্শ্ব শিক্ষক সমীর নায়েক। অন্য একটি ঘরে পড়াচ্ছেন স্কুলের সহ-শিক্ষক রঞ্জন পাল। আচমকা স্কুলের বাইরে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ। শিক্ষকেরা বেরিয়ে দেখলেন স্কুলের বাইরে পুলিশের পাইলট কার, তার সঙ্গে লালবাতি দেওয়া মন্ত্রীর গাড়ি। চোখের নিমেষে গাড়ি থেকে নেমে স্কুলে ঢুকলেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। ছবিটা ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর-১ ব্লকের আঁধারিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধামোহনপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
মন্ত্রীর সঙ্গে ছিল নানা উপহার। ক্লাসের মধ্যেই খুদে পড়ুয়াদের উপহার দিলেন মন্ত্রী বিরবাহা। ডালিতে ছিল আঁকার খাতা, রং, পেন্সিল ও চকোলেট। ততক্ষণে মিড-ডে মিলের সময় হয়ে গিয়েছে। তা দেখে মন্ত্রী জানালেন তিনি নিজেও বসবেন মিড-ডে মিলের সারিতে। তার পরে পড়ুয়াদের সঙ্গেই মাটিতে বসে পাত পেড়ে খেলেন ভাত। সঙ্গে ছিল ডাল, আলু-পটলের তরকারি ও সেদ্ধ ডিম। খাওয়ার পরে স্কুলের চৌহদ্দির কলে নিজের থালা নিজেই ধুলেন মন্ত্রী।
যে এলাকায় এই স্কুল রয়েছে, সেই রাধামোহনপুর গ্রাম এক সময়ে মাওবাদী অধ্যুষিত ছিল। চারিদিক জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন মাওবাদী নেতা কিষেনজি। সেই সময় দিন এখন অতীত। অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে গ্রামের চেহারা, ছোঁয়া লেগেছে উন্নয়নের। এই প্রাথমিক স্কুলে এখন ৫১ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন ছাত্র ও ২৬ জন ছাত্রী। এ দিন মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে এবং তাঁর হাত থেকে উপহার পেয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে খুদে পড়ুয়ারা। কয়েকজন খুদে পড়ুয়া গোলাপ ফুল এনে দেন মন্ত্রীর হাতে। কয়েকজন ফুল দিয়ে বানানো মুকুট পরিয়ে দেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে। এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিনপুর-১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পূর্ণিমা মুর্মু।
মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে স্কুলের নানা সমস্যার কথা খুলে বলেছেন শিক্ষকরা। স্কুলের পাঁচিল ঠিকমতো তৈরি করার লিখিত আবেদন করা হয় মন্ত্রীর কাছে। কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস পাল বলেন, ‘মন্ত্রী পড়ুয়াদের সঙ্গে মাটিতে বসে মিড-ডে মিল খাবেন তা আমরা বুঝতে পারিনি। উনি আচমকাই স্কুলে এসেছেন। স্কুলের পাঁচিল নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।’ এ দিন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘বাচ্চারা ফুল দিয়ে হাতে বানানো হেয়ারব্যান্ড পরিয়ে দিয়েছে। আমি আপ্লুত। স্কুলের উন্নতির জন্য যা যা প্রয়োজন, তা আমি করব। পড়ুয়াদের সঙ্গে খুব ভালো মিড-ডে মিল খেয়েছি।’ খুদে পডুয়াদের আগামী সপ্তাহে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল চিড়িয়াখানায় ঘোরাতে নিয়ে যাবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।