• পড়াশুনায় মনোযোগ বাড়াতে হাতিয়ার পুতুল নাচ
    এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৫
  • আশিস নন্দী, গোবরডাঙ্গা

    নিজে সে অলক্ষ্যে থাকে, হাতে তার নানাবিধ সুতো/কলকাঠি, নানা রঙা, নাড়ে চড়ে যখন তখন....।

    বাংলার প্রাচীন লোকসংস্কৃতি হিসাবে পুতুল নাচের সুমহান ঐতিহ্য রয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ উপন্যাসে পুতুল নাচের রূপকে তুলে ধরা হয়েছে বাংলার গ্রামীণ জীবনকে। একটা সময় শৈশবের অন‍্যতম প্রধান সঙ্গী ছিল পুতুল। গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতায় তার উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়ে।

    পুতুল খেলার ঘর কিংবা পুতুলের বিয়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। সেই সময় পুতুলকে পরানো হতো রং-বেরঙের জামা কাপড়, পুঁতির হার, ইমিটেশনের অলঙ্কার। তারই সূত্র ধরে বাংলায় জাঁকিয়ে বসেছিল পুতুল নাচ। নিছক বিনোদন ছাড়াও পুতুল নাচের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়, পালাগান, পৌরাণিক গল্প উপস্থাপন করা হতো। যা সহজেই মানুষের মনকে ছুঁয়ে যেত। কিন্তু মোবাইল ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পুতুল নাচের জনপ্রিয়তায় এখন ভাটা পড়েছে। হারিয়ে যেতে বসেছে পুতুল নাচ। তারই পুনরুজ্জীবন ঘটাতে এগিয়ে এসেছে গোবরডাঙার খাটুরা শিল্পাঞ্জলি।

    পড়ুয়াদের মনোযোগ বাড়াতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পুতুল নাচকে হাতিয়ার করতে চাইছে সংস্থাটি। পুতুল নাচের ঐতিহ্য সম্পর্কে ছাত্র–ছাত্রীদের অবহিত করতে স্কুলে স্কুলে কর্মশালার আয়োজন করছে তারা। পুতুল নাচ কী, কী ভাবে পুতুল বানানো হয়, পুতুলের পোশাক কেমন হয়, তাদের রূপসজ্জা কেমন হয়, সমস্তটাই হাতে ধরে শেখানো হচ্ছে। তারই অঙ্গ হিসাবে গত ২৫ মার্চ গোবরডাঙ্গার প্রীতিলতা বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্রদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। পড়ুয়ারা ছাড়াও অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস চক্রবর্তী, গাইঘাটা ইছাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক পাল এবং নাট্য গবেষক অভীক ভট্টাচার্য। সেখানে পৌরাণিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে পুতুল নাচকে উপস্থাপন করা হয় ছাত্রদের সামনে।

    উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, যে সব পড়ুয়ারা কর্মশালায় অংশ নিয়েছিল তারা খুব উৎসাহ নিয়েই পুতুল তৈরির কলাকৌশল রপ্ত করেছে। কী ভাবে পুতুলদের নাচাতে হয়, সেটাও ছাত্রদের হাতে ধরে শেখানো হয়েছে। মূলত চার ধরনের পুতুল হয়ে থাকে। এগুলি হল ডাঙ্গের পুতুল, সুতো পুতুল, বেণী পুতুল এবং ছায়া পুতুল। পুতুলগুলো কেমন দেখতে হয়, একটা পুতুলের সঙ্গে আর একটা পুতুলের কী পার্থক্য, সে বিষয়েও তাদেরকে অবহিত করা হয়।

    গত ২০০৫ সাল থেকে পুতুল নাচ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালার আয়োজন করছে খাটুরা শিল্পাঞ্জলি। ভিন রাজ্য থেকে ডাক আসছে। খাটুরা শিল্পাঞ্জলির সদস্যা তথা সেন্টার ফর কালচারাল রিসোর্স অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সিনিয়র ফেলো সোমা মজুমদার বলেন, ‘প্রাচীন এই সংস্কৃতির প্রতি নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়াতেই আমাদের এই উদ্যোগ। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আমরা পুতুল নাচকে ব্যবহার করি। এটা পড়ুয়াদের মনোযোগ বাড়ানোর জন্য খুবই উপযোগী হতে পারে।’ তাঁর কথায়, ‘ক্লাসে অনেক পড়ুয়াই ততটা মনোযোগী হয় না। শিক্ষক–শিক্ষিকারা যদি পুতুল নাটকের মাধ্যমে বিষয়গুলিকে তুলে ধরেন, তাহলে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়বে।’

  • Link to this news (এই সময়)