নীলাঞ্জন দাস, রায়গঞ্জ
দোকানে বার বার চুরির ঘটনা ঘটছে! প্রায়দিনই সুযোগ বুঝে দোকানে এসে জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিচ্ছিলেন এক চোর।
তক্কে তক্কে ছিলেন দোকান মালিকের স্ত্রী। দোকানে রাখা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজর রাখছিলেন তিনি। শেষে শুক্রবার রীতিমতো ধাওয়া করে সেই চোরকে ধরেছেন ওই গৃহবধূ। অভিযুক্তকে রায়গঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে।
গৃহবধূর সাহসিকতা নিয়ে শহর জুড়ে শুরু হয়েছে চর্চা। হবে নাই বা কেন? ওই গৃহবধূ ডলি কুণ্ডু সরকারের বাবার বাড়ি বিহারের কিষানগঞ্জে। ছোট থেকেই দৌড়, ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। রীতিমতো শরীরচর্চার অভ্যাস রয়েছে তাঁর।
রায়গঞ্জ শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুদর্শনপুর এলাকায় স্পেয়ার পার্টসের দোকান বাপি সরকারের। বেশ কিছুদিন ধরে দিনে দুপুরে এক দুষ্কৃতী দোকান থেকে বিভিন্ন মালপত্র চুরি করে চম্পট দিচ্ছিলেন। একাধিক ক্রেতা থাকায় ঠিক কে এমনটা ঘটাচ্ছিলেন, তা ঠাহর করতে পারছিলেন না বাপি। গত বুধবার প্রতিবেশী এক মহিলা দেখেন এক ব্যক্তি সন্দেহজনক ভাবে দোকানে ঢুকে একটি জিনিস নিয়ে চলে গেলেন। বিষয়টি বাপিকে জানান প্রতিবেশী ওই মহিলা। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয় বাপি ও তাঁর পরিবারের। দেখা যায়, একদিনের ঘটনা নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই একই ব্যক্তি সুযোগ বুঝে দোকান থেকে জিনিস নিয়ে চম্পট দিচ্ছেন।
ওই ব্যক্তিকে চিনতেও পারেন বাপি। তাঁর অভিযোগ, এর আগেও এই ব্যক্তি তাঁর পেট্রোলপাম্পে চুরি করেছিলেন। বাপি এ বারে হিসেব করে দেখেন, গত কয়েকদিনে আনুমানিক লক্ষাধিক টাকার জিনিস তাঁর দোকান থেকে খোওয়া গিয়েছে। বাপি বিষয়টি স্ত্রী ডলিকে বলেন। চোর ধরতে আসরে নামেন ডলি। জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরে ডলি সিসিটিভিতে নজর রাখতে শুরু করেন। শনিবার দুপুরেও সেই ব্যক্তি ধীর পায়ে দোকানের সামনে হাজির হন।
সিসিটিভির মনিটরে তাঁকে দেখে বাপি চিনতে পারেন। ওই ব্যক্তি দোকানে ঢুকে একটি জিনিস তুলে নিতেই তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান ডলি। চোর দোকান থেকে বেরিয়ে ছুটতে শুরু করেন। ডলি তাঁর পিছনে প্রায় ২০০ মিটার দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। ডলির চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে রায়গঞ্জ থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম কাশেম আলি। বাড়ি রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায়। ডলি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
ডলি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে দোকানে চুরি হচ্ছে। পুলিশকে বলে কোনও লাভ হয়নি। আমি নিজেই পাহারা দিচ্ছিলাম। নিয়মিত সিসিটিভিতে নজর রাখছিলাম। আজ দুপুর বারোটা নাগাদ দেখি কোনও একটা জিনিস নিয়ে পালাবে বলে অন্যদিনের মতো আজও টার্গেট করে এসেছে ওই চোর। ইতিমধ্যেই জেনেছি ও চুরির মালপত্র হেমতাবাদে বিক্রি করে। আমিও রেডি ছিলাম।
যখনই ও দোকানে এসে একটি মাল তুলতে যায়, অমনি আমি ওর উপরে অ্যাটাক করি। প্রথমে ধরতে গেলে ও কোনওরকমে পালানো শুরু করে। আমি ওর পিছনে দৌড় দিই। অনেকটা দৌড়ে ওকে ধরে ফেলি। তারপর লোকজন ছুটে আসে এবং ওকে বেঁধে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওকে থানায় নিয়ে যায়। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, আর চুরি যাওয়া জিনিসপত্রগুলি উদ্ধার — আমি শুধু এটুকু চাই।’
ডলির এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় পুর কো- অর্ডিনেটর শিল্পী দাস বলেন, ‘চারিদিকে যে ভাবে চুরির ঘটনা ঘটছে, ডলির মতো সবাই একটু সতর্ক থাকলেই তা বন্ধ হবে।’