• যাদবপুরের অপসারিত ভিসিকে টাকা ফেরানোর নির্দেশ রাজভবনের
    এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে দু’দিন আগে আচমকা সরিয়ে দিয়েছিলেন আচার্য–রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এ বার তাঁকে গত ২৪ ডিসেম্বর হয়ে যাওয়া সমাবর্তনে খরচ করা অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজভবন!

    রাজ্যপালের সচিবালয়ের এক উপসচিবের শনিবারের চিঠির বক্তব্য, সমাবর্তন হয়েছে অবৈধ ভাবে, ফলে খরচ যা হয়েছে, তাও বেআইনি। শিক্ষামহলের বক্তব্য, রাজ্য–রাজভবন টানাপড়েন অনেক দিন ধরে চ‍ললেও এ ভাবে সমাবর্তনে খরচ হওয়া টাকা উপাচার্যকে ফেরত দিতে বলা অভূতপূর্ব, আপত্তিকর।

    ভাস্করের প্রতিক্রিয়া, ‘এই চিঠির কোনও সারবত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি (ইসি) ও কোর্টের অনুমোদন নিয়েই সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছিল।’ একাধিক ইসি সদস্যও জানাচ্ছেন, স্বয়ং ভাস্কর রাজভবনে গিয়ে আচার্য–রাজ্যপালকে সমাবর্তনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন। তা ছাড়া সমাবর্তন হওয়ার তিন মাস পরে কেন রাজভবনের তরফে ভাস্করকে এমন চিঠি দেওয়া হলো, সে প্রশ্নও উঠেছে।

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) তরফে আচার্যর ভূমিকার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। জুটা–র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে পড়ুয়া ও গবেষকদের স্বার্থেই ২০২৪–এর সমাবর্তন হয়েছিল। সমাবর্তনের জন্যে অনুমোদিত বাজেট থেকেই অর্থ খরচ হয়েছিল। যা ফিনান্স কমিটি এবং ইসি অনুমোদনও করেছিল।

    সুতরাং সমাবর্তন সংক্রান্ত কোনও বেআইনি কাজ হয়েছে বলা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক রাজেশ্বর সিনহার বক্তব্য, ‘গত বছর সমাবর্তনের দিন সকালে কোর্ট মিটিংয়ে আচার্যর প্রতিনিধি হিসেবে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক জীতেন্দ্রনাথ রায় উপস্থিতও ছিলেন। তার পরেও রাজভবন কী করে বলে, সমাবর্তন অবৈধ!’

    তবে আচার্যর এই ভূমিকা নতুন নয় বলেই জানাচ্ছেন যাদবপুরের আর এক অপসারিত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। ২০২৩–এর ২৪ ডিসেম্বর সমাবর্তনের আগের দিন বুদ্ধদেবকেও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এই রাজ্যপাল। বুদ্ধদেব এ দিন বলেন, ‘রাজ্য সরকারের সম্মতি নিয়ে পর দিন ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে প্রথা মেনে ক্যাম্পাসে সমাবর্তন হয়েছিল। সেই সময়েও সমাবর্তনে খরচ হওয়া আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা মৌখিক ভাবে আমার থেকে রাজভবন ফেরত চেয়েছিল।’ সূত্রের খবর, ২০২৪–এর সমাবর্তনে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।

    এমনিতেও আচার্য–রাজ্যপাল আচমকা ভাস্করকে অপসারণ করায় যাদবপুর ক্যাম্পাসে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উপাচার্য নেই। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার, ডিনও নেই। সবাই ভারপ্রাপ্ত। স্থায়ী হিসেবে সবেধন নীলমণি শুধুই সহ–উপাচার্য অমিতাভ দত্ত। যিনি আবার এক সময়ে রাজভবনের চাপে স্বেচ্ছায় অন্তর্বর্তী উপাচার্যর দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনন্দিন যাবতীয় কাজেই প্রবল সমস্যা তৈরি হবে বলে মত শিক্ষক, আধিকারিক এবং প্রাক্তন প্রশাসকদের। বিশেষত, পড়ুয়াদের পড়াশোনা, গবেষণা ও কল্যাণমূলক যে কোনও কাজে যেখানে এক লাখ টাকার বেশি অর্থের প্রয়োজন, সে–সব ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী উপাচার্যের অনুমোদন লাগে। এখন সে নিয়ে প্রবল সঙ্কট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা। নীতিগত বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণও আটকে যাবে।

    ইলেকট্রনিক্স এবং টেলি–কমিউনিকেশনের অধ্যাপক হিসেবে অবসরের চার দিন আগে বৃহস্পতিবার রাজভবন ভাস্করকে ভারপ্রাপ্ত ভিসির পদ থেকে সরিয়েছে। এর আগে বুদ্ধদেবকে ২০২৩–এর ডিসেম্বরে সরানো হয়েছিল। সে বছর অগস্টে অমিতাভও পদত্যাগে এক রকম বাধ্য হন। এই প্রতিটি পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে একই রকম প্রশাসনিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যাদবপুরের প্রাক্তন সহ–উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, ‘যাদবপুরের আইন ও স্ট্যাটিউট অনুযায়ী, সব ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভিসির উপরেই ন্যস্ত। তিনি অন্য কাউকে সেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে না গেলে বিশ্ববিদ্যালয় অাকাডেমিক, আর্থিক এবং প্রশাসনিক ভাবে অচল হয়ে পড়বে। এখন ইসি, কোর্ট বা ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল — কোনও বৈঠকই হচ্ছে না। ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মও চালানো কঠিন।’

  • Link to this news (এই সময়)