প্রদীপ চক্রবর্তী, জিরাট
মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে ডাণ্ডি অভিযান, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়ানো বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু কিংবা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর— ইতিহাসের নানা খণ্ড চিত্র ফুটে উঠছে চার দেওয়ালে। না, এটা কোনও জাদুঘর কিংবা মিউজিয়াম নয়। বলাগড় জিরাটের নেতাজি নগর গ্রামের হস্তশিল্পী প্রশান্ত অধিকারী ঘরের দেওয়ালে বন্দি করে রাখছেন ইতিহাসকে।
কাঠের অপূর্ব কারুকাজ দিয়ে ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার মধ্যে যেমন ইতিহাসের অনেক ঘটনা স্থান পেয়েছে, তেমনি বহু খ্যাতনামা মনিষী, ঠাকুর, দেব–দেবীর ছবি বানিয়েছেন কাঠ দিয়ে। প্রায় ৩০ বছর ধরে নিজেকে এই কাজে ব্যস্ত রেখেছেন কাষ্ঠ শিল্পী প্রশান্ত। তার জন্য অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন।
জেলা ও রাজ্যের তরফেও তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ২০১১ ও ২০২১ সালের পর চলতি বছরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের তরফে পশ্চিমবঙ্গ কারুশিল্প প্রতিযোগিতায় সন্মানিত হয়েছেন প্রশান্ত। এখন তাঁর লক্ষ্য, হস্তশিল্পে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের সন্মান অর্জন করা। তার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে চলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা অরুণ অধিকারীর কাঠের গোলা ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাঠের নানা আসবাব পত্র তৈরি হতো। সেই সুবাদে শৈশব থেকেই বাতিল কাঠের টুকরো নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন তিনি। পরবর্তী কালে সেই সব কাঠের টুকরো দিয়ে তিনি একের পর এক শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন।
তার সঙ্গে ছবি আঁকারও প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডী পার হওয়ার পর আপাতত নিজের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত রয়েছেন প্রশান্ত। তবে লক্ষ্যটা রয়েছে সামনে।
কাঠের খণ্ড দিয়ে তৈরি করেছেন বীণা বাদনরত সরস্বতীর মূর্তি। শিল্পী প্রশান্ত অধিকারী বলেন, ‘সমস্তটাই হাতুরি আর বাটালি দিয়ে কাঠ কেটে তৈরি করা হয়েছে। এতে আমি কোনও রঙের ব্যবহার করি না। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামের ছেলে–মেয়েদের নিরখরচায় প্রশিক্ষণ দিই। আমার লক্ষ্য হলো, হস্তশিল্পের প্রসার ঘটানো। আমার এই কাজে মা প্রতিমা অধিকারী ও আমার স্ত্রী কবিতা অধিকারীর অনেক অবদান রয়েছে।’