এই সময়, ঝাড়গ্রাম: ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তাই ছোট থেকে মাঠ দাপিয়ে বেরিয়েছে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। মাত্র বারো ঘণ্টার জ্বরে মৃত্যু হলো অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার। সুমন হাঁসদা (১৪) নামে ওই ছাত্রের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে বাবা-মা থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিসিইউতে মারা যায় সুমন। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুলে।
সুমনের বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। বাড়িতে রয়েছেন বাবা–মা–বোন। বাবা চৈতন্য হাঁসদা কৃষির সঙ্গে যুক্ত। ছোট থেকে সুমনের ফুটবল খেলার প্রতি বেশি ঝোঁক। গ্রামে ফুটবল খেলা হলেই দেখতে চলে যেত। গ্রাম সংলগ্ন স্থানীয় এড়গোদা নিত্যানন্দ বিদ্যায়তনে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল সুমন।
কিন্তু ভালো ফুটবল খেলার জন্য আবাসিক মানিকপাড়া বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগ পায়। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এই স্কুলের ছেলেরা গত বছর সুব্রত কাপেও জয়লাভ করেছিল। সুমনের জ্যাঠতুতো দাদা বুদ্ধেশ্বর হাঁসদা বলেন, ‘ভালো ফুটবল খেলার জন্য ট্রায়ালে ভাই বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে সুযোগ পায়। সেখানে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। বৃহস্পতিবারও ফুটবল খেলেছিল। শুক্রবার জ্বর আসে।’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার স্কুলে মিড-ডে মিল খেতে না আসায় সুমনের খোঁজ করেন শিক্ষকরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শৈবাল মহাপাত্র বলেন, ‘যখন শুনলাম জ্বর হয়েছে সুমনকে আমরা মানিকপাড়া প্রাইমারী হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাই। চিকিৎসক দেখে ওষুধ দেওয়ার পরে হস্টেলে নিয়ে আসা হয়। ওষুধ খায় কিন্তু সন্ধ্যায় ফের জ্বর বাড়লে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এরই মাঝে ওর পরিবারকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। তারপর রাতে কাঁপুনি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে দেখে আমরা ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
সুমনের মা মণি হাঁসদা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘প্রথমে হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে ছিল। শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ায় সিসিইউতে নিয়ে যায়। সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখান থেকে জানানো হয় ছেলে আর নেই।’ চৈতন্য বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় স্কুল থেকে ফোন করেছিল। তখন আমরা বুঝতে পারিনি। পরে মোবাইল দেখে রাত ৮টায় হস্টেলে ফোন করি। ছেলের জ্বর হয়েছে এবং ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দ্রুত আসতে বলে। জ্বরের মাত্র বারো ঘণ্টার মধ্যে ছেলের মৃত্যু হয়, মেনে নিতে পারছি না।’
ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার সকালে হাসপাতালে আসেন প্রধান শিক্ষক শৈবাল মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘ওর বাবা ছেলেকে ভালো করে মানুষ করার কথা বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’ ময়নাতদন্তের পরে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
গত একমাসে অসুস্থ হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাত বছরের শুভদীপ শবর এবং সুমিত নায়েকের মৃত্যু হয়। নাবালকদের কেন এ ভাবে মৃত্যু হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্যদপ্তর। ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘তিন ছাত্রের মৃত্যু হলো। কেন এরকম হচ্ছে, তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’