• ধ্বংস কাঠামবাড়ি জঙ্গলের ‘সম্পদ’, আগুন নেভাতে কী ব্যবস্থা বন দপ্তরের?
    এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৫
  • দু’পাশে ঘন অরণ্য। আর তারই মাঝে বুক চিরে চলে গিয়েছে পিচের রাস্তা। বেশ কিছুটা গিয়ে ঢুকে গিয়েছে বৈকুণ্ঠপুর ফরেস্ট ডিভিশনের আপালচাঁদ রেঞ্জের মাঝে কাঠামবাড়ির জঙ্গল মোড়। একদিকে চা-বাগান, আর অন্য দিকে ঘন জঙ্গলমহল। পর্যটকদের কাছে খুবই পরিচিত। দেবেশ রায়ের উপন্যাস ‘তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্তে’-এই জঙ্গলের উল্লেখ রয়েছে। সেই জঙ্গলেই আগুন।

    গত সপ্তাহের পরে শুক্রবার থেকে আবার হঠাৎ আগুন লাগে ডুয়ার্সের কাঠামবাড়ি জঙ্গলে। বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের আওতাধীন আপালচাঁদ রেঞ্জের কাঠামবাড়ি জঙ্গলের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে আগুন লেগেছে। জঙ্গলের অধিকাংশ জায়গায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে সেই আগুন কাঠামবাড়ি জঙ্গল পেরিয়ে সংলগ্ন অন্য জঙ্গলেও ছড়িয়ে পড়ে।

    বৈকুন্ঠপুর বনাঞ্চল অসংরক্ষিত বলা হলেও কাঠামবাড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। রেঞ্জের নাম আপালচাঁদ। তিস্তা নদীর দু’পাড় দিয়ে গড়ে উঠেছে বৈকুন্ঠপুর। তিস্তার বাঁ দিকের এই রেঞ্জটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে ভালো গুণমানের শাল গাছ এখানেই রয়েছে। সারা বছর এই জঙ্গলে বুনো হাতি এবং চিতাবাঘ থাকে। সারা বছর নানা ধরনের দুর্লভ পাখিও দেখতে পাওয়া যায়।

    শাল ছাড়া আপালচাঁদের আরও একটি গুরুত্ব হলো বাঁশের নানা প্রজাতি এই এলাকায় পাওয়া যায়। জঙ্গলে ভূমিক্ষয় রোধের বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঁশ ছাড়া নানা প্রজাতির অর্কিড পাওয়া যায়। ফলে বন দপ্তরের কাঠামবাড়ি–সহ গোটা আপালচাঁদ রেঞ্জে বিশেষ নজর থাকে।

    তবে উত্তরবঙ্গের অন্য জঙ্গলের মতো এখানেও অবাধে গবাদি পশুর বিচরণ বন দপ্তরের মাথাব্যথার কারণ। গবাদি পশুর পিছন পিছন রাখালেরাও ঢোকে। নতুন ঘাসের লোভে তাঁরাই শুকনো পাতায় আগুন লাগিয়ে দেয় বলে সন্দেহ। আগুন নিয়ন্ত্রণে এখন জোর কদমে ‘ফায়ার লাইনিং’ তৈরির কাজ চলছে।

    ফায়ার লাইনিং অর্থাৎ জঙ্গলটিকে কয়েকটি জ়োনে ভাগ করে কাল্পনিক বর্ডার ধরে শুকনো পাতা পরিষ্কার করে দেওয়া। লক্ষ্য, যাতে একটি জ়োন থেকে আগুন অন্যত্র ছড়াতে না পারে। বৈকুন্ঠপুর বন বিভাগের ডিএফও রাজা এম বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বনকর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। আগুনের মাত্রা কোথায়, কেমন রয়েছে, তা দেখার জন্য স্যাটেলাইটের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও সে ভাবে সামনে আসেনি।’

    তথ্য সহায়তায়: সঞ্জয় চক্রবর্তী, অর্ঘ্য বিশ্বাস

  • Link to this news (এই সময়)