সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে জমে থাকা জঞ্জালকে কাজে লাগিয়ে এ বার বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনা করল হাওড়া পুরসভা। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে প্রতিদিন হাওড়া শহরে ৫৫০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন জঞ্জাল জমা হয়। সেই জঞ্জাল বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ফেলতে ফেলতে দু’টি বড় পাহাড়ের আকার নিয়েছে। সেই ভাগাড় ধসে গিয়েই গত বুধবার বিপত্তি হয়। পুরসভার পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, কী ভাবে ওই জঞ্জালকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়।
সুজয় বলেন, ‘জঞ্জালের পরিমাণ কমানোর জন্য বায়োমাইনিংয়ের কাজ ইতিমধ্যেই চলছে। একটি ইউনিট কাজ করছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে আরও একটি ইউনিট মিলে এখন দু’টি ইউনিট বায়োমাইনিংয়ের কাজ করছে, যাতে দ্রুত ওই জঞ্জাল কমানো যায়। পুরসভার লক্ষ্য বছর দেড়েকের মধ্যে বায়োমাইনিংয়ের মাধ্যমে এই জঞ্জাল কমিয়ে ফেলে এখানে ওয়েস্ট টু এনার্জি প্লান্ট তৈরি করা।
এ দিকে বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিপর্যয়ের জেরে উত্তর হাওড়া এবং সালকিয়াতে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত কয়েকদিন নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই বন্ধ ছিল। এর ফলে ভ্যাটগুলিতে জঞ্জালের পাহাড় জমে যায়। তবে হাওড়া পুরসভার পক্ষ থেকে সোমবার ইদের আগে সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কিছু ওয়ার্ডে গত কয়েক দিন জঞ্জাল সাফাই না হওয়ায় সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। চ্যাটার্জিহাট, কদমতলা, পঞ্চাননতলা, সালকিয়া, শিবপুর এবং টিকিয়াপাড়া এলাকায় অধিকাংশ ভ্যাটে জঞ্জাল উপচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রবিবার সকালেও আবর্জনা সাফাই না হওয়ায় পুরসভার গাড়ি আটকে শরৎ চ্যাটার্জি রোড দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ গত পাঁচদিন ধরে ময়লা পরিষ্কার না হওয়ায় সব জায়গায় আবর্জনার স্তূপ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাস্তায়। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা দায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভাকে বারবার জানানো সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরে অবশ্য হাওড়া পুরসভার ডাম্পার গিয়ে জঞ্জাল তোলে।
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতিদিন হাওড়া শহরের ৬০০ মেট্রিক টন আবর্জনা তৈরি হয়। বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিপর্যয়ের কারণে জঞ্জাল সাফাই করতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সহযোগিতায় পুরসভা ২০টি অতিরিক্ত বড় ডাম্পার পেয়েছে। ফলে দিনে এবং রাতে কাজ করে জমা জঞ্জাল সরাসরি ধাপার মাঠে ফেলা হচ্ছে।’ তিনি আশ্বাস দেন সোমবার ইদের সকালের মধ্যে শহরের সব জায়গা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। রবিবার স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির ডিরেক্টর জলি চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে শহরের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখেন সুজয়।
এ দিকে নিকাশি নালা বুজে যাওয়ায় বেলগাছিয়ার আশপাশে বামুনগাছি সি রোড, বি রোড এলাকায় এখনও জমে রয়েছে নোংরা কালো জল। সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বেলগাছিয়া পচা খালের জন্য জল নিকাশি বাধা পেয়েছিল। সেই খালটির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এই জমা জল খুব শীঘ্র নেমে যাবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।