• চৈত্রেই শুরু দহন, হাঁসফাঁস জনজীবন, সঙ্কটে চাষ
    এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: তীব্র দহনের দাপটে বাতাসে যেন বসন্ত বিদায়ের বার্তা। মার্চের শেষেই প্রখর রোদে হাঁসফাঁস অবস্থা জঙ্গলমহল থেকে শুরু করে সৈকত এলাকার। তাপমাত্রার বাড়বাড়ন্তের প্রভাব পড়েছে জনজীবন থেকে মাঠে–ঘাটে, দোকানপাটে এবং স্কুল–কলেজেও। সেচের জলের অভাবে সঙ্কটে চাষ। স্কুলে অস্বস্তিতে খুদে পড়ুয়ারা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, গরম আরও বাড়তে পারে। ফলে চরম অস্বস্তি থেকে এখনই নিস্তার নেই দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে।

    দু’সপ্তাহ আগে শিলাবৃষ্টির জেরে কৃষি ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতি হলেও পরিবেশের তাপমাত্রা ছিল বেশ উপভোগ্য। সে সময় কয়েকদিন ভরা বসন্তেও বর্ষার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। তবে সে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দিনপাঁচেক আগে থেকে বাড়তে শুরু করে দিনের তাপমাত্রা। সকাল ১০টা থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে রোদের দাপট। বিকেল ৩টে পর্যন্ত বইছে লু। গরমের চোটে দুপুর ১১টার পর থেকে রাস্তা সুনসান। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ রাস্তায় বেরোচ্ছেন না। তাপপ্রবাহের প্রভাব বেশি পড়েছে কৃষিক্ষেত্রে। পাঁশকুড়া এলাকায় ব্যাপক হারে ফুল ও আনাজ চাষ হয়। অত্যদিক রোদের কারণে জমিতে সেচ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রোদের তাপে ফুল ও আনাজ বাগানেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পাঁশকুড়ার মহৎপুর গ্রামের ফুলচাষি গণেশ মাইতি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুরে লু বইছে। গরমে ফুলের পাপড়ি ঝলসে যাচ্ছে। বাগান থেকে ফুল তোলার পর বেশিক্ষণ টাটকা থাকছে না।’

    গরম মোকাবিলায় প্রস্তুত স্বাস্থ্য দফতর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে ইতিমধ্যে হাসপাতালগুলিতে ‘অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। তমলুকের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় বলেন, ‘প্রতি সরকারি হাসপাতালে ওআরএস কর্নার রয়েছে। গরমের সমস্য সমস্য হাসপাতালে জরুরি পরিষেবার জন্য অতিরক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার চালানো হচ্ছে। দিনের বেলায় বাইরে বেরোতে হলে সঙ্গে ছাতা রাখুন। সুতির পোশাকে শরীর ঢেকে রাখুন। প্রচুর জল খান। সানগ্লাস পরুন। গরমে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে ছায়ায় নিয়ে আসুন। তার সারা শরীরে জল দিন। তারপর তাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসুন।’

    অত্যধিক গরমের কারণে সমস্যায় পড়েছে স্কুল পড়ুয়ারাও। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ৩ এপ্রিল থেকে জেলার সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যায়ে মর্নিং সেশনে ক্লাসের ঘোষণা করেছে। সংসদের চেয়ারম্যান জয়দীপ হোতা বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সকাল সাড়ে ছ’টায় স্কুল বসবে। চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত। মিড ডে মিল হবে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। নোটিস জারি করে সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

    যদিও পূর্ব মেদিনীপুরে মর্নিং স্কুল নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মর্নিং স্কুলের জন্য শিক্ষা দপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন। আমরা রাজ্যের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। অনুমতি পেলে আগামী সপ্তাহ থেকে জেলার সমস্ত প্রাইমারি স্কুলে সকালে পঠনপাঠন হবে।’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অনিমেষ দে বলেন, ‘আমরা রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি যদি ১৬ এপ্রিল থেকে মর্নিং স্কুল করা যায়। আবহাওয়ার উপর নজর রেখেই রাজ্য নিশ্চয় দ্রুত তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। তারপরই মর্নিং স্কুল চালু করা হবে।’

    গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিংও। পাঁশকুড়ার পাতন্দা গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা মান্না বলেন, ‘আজ সকাল থেকে অন্তত ২০ বার লোডশেডিং হয়েছে। গরমের মধ্যে লোডশেডিং হলে বাড়িতে থাকা যায় না। বিদ্যুৎ দফতরের উচিত পরিষেবা সচল রাখা।’

  • Link to this news (এই সময়)