• দুই প্রাক্তনীর অর্থে গবেষণাগার শিবপুর আইআইইএসটি-তে
    এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৫
  • সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া

    পেটের টানে বাংলাদেশে নিজের জন্মভিটে ছেড়ে চলে এসেছিলেন এপার বাংলায়। তারপর শিবপুর বি ই কলেজে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন অধ্যাপনার কাজে। কর্মসূত্রে বর্তমানে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে থাকেন। কিন্তু আজও ভুলতে পারেননি তাঁর পুরোনো কলেজকে। ছাত্রদের গবেষণার জন্য নিজের কষ্টার্জিত রোজগার থেকে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা দান করলেন বিই কলেজের প্রাক্তনী অরুণ দেব।

    বাবা ছিলেন স্কুল মাস্টার। ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। বাবার রোজগারপাতি তেমন ছিল। সংসারে অনটন লেগেই থাকত। কিন্তু তাতে দমে যাননি মেধাবী ছাত্রটি। ১৯৫০ সালে জন্মভিটে ছেড়ে চলে আসেন হুগলির চুঁচুড়ায় দাদার কাছে। দাদা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। দাদার কাছে থেকেই হুগলির মহসিন কলেজে ভর্তি হন। এরপর ১৯৫৩ সালে শিবপুর বিই কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন।

    সেখান থেকে পাশ করার পর ১৯৫৭ সালে প্রিন্সিপালের অনুরোধে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। ১২ বছর শিক্ষকতা করার পর চলে যান লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তিন বছর অধ্যাপনা করার পর আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়ান। পরে তিনি একটি কনসাল্টেন্সি ফার্মে যোগ দেন। সেখান থেকে ২০০৩ সালে অবসর নেন। তবে তাঁর কাজের কোনও বিরাম নেই। গ্রামের মানুষ যাতে আর্সেনিক মুক্ত জল পান তার জন্য এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

    অরুণ বাবু জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে তিনি শিবপুর আইআইইএসটি–তে একটি প্রকল্পে পানীয় জল নিয়ে কাজ করতে আসেন। তারই সূত্রে গ্রামবাসীরা যাতে সামান্য খরচায় আর্সেনিক মুক্ত জল পান তার জন্য একটি নতুন মডেল তৈরি করেন। নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা এবং মুর্শিদাবাদের প্রায় ২০০ গ্রামে এই প্রকল্প চালু করেন। এর মাধ্যমে কী ভাবে ডিপ টিউবওয়েল থেকে জল তোলার পর সেটাকে শোধন করতে হবে, সে বিষয়ে গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

    বর্তমানে তিনি আমেরিকার পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বছরের ৬ মাস আমেরিকায় থাকলেও বাকি ৬ মাস কলকাতার সন্তোষপুরে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘বিই কলেজের সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। এখনও বছরে দু’বার আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসি।’ তাঁর দেওয়া অর্থে শিবপুর আইআইইএসটি–তে যে নতুন গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হবে তার নাম হবে ‘অরুণ অ্যান্ড ধৃতি দেব সেন্টার ফর ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল স্টাডিজ’। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা জল এবং পরিবেশ নিয়ে উন্নত মানের গবেষণা করতে পারবেন।

    বিই কলেজের অরুণবাবুর সহপাঠী ছিলেন সুধাংশুশেখর চক্রবর্তী। এখন তিনি দিল্লিতে থাকেন। একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টেন্সি সার্ভিস কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন আইআইটি–র ভিজিটিং প্রফেসরও ছিলেন। তিনিও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি টাকা দান করেছেন। তা দিয়ে ‘চিরশ্রী সেন্টার অফ সাসটেনেবেল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি গবেষণাগার তৈরি হবে। শনিবার শিবপুর আইআইইএসটি–তে এক অনুষ্ঠানে দু’জনেই দানের অর্থ তুলে দেন। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।

  • Link to this news (এই সময়)