• রেল বেসরকারিকরণ রুখতে সর্বভারতীয় কনভেনশন
    এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, আসানসোল: ভারতীয় রেল এবং চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন সমেত দেশের বিভিন্ন রেল কারখানাগুলিতে উঠেছে বেসরকারিকরণের হাওয়া। পাশাপাশি শূন্যপদগুলিতে এখনও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। সঙ্গে রয়েছে রেলযাত্রী সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও। তারই প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার চিত্তরঞ্জনের রবীন্দ্র মঞ্চে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত জাতীয় কনভেনশন হয়ে গেল।

    উদ্যোক্তা চিত্তরঞ্জনের সিটু অনুমোদিত লেবার ইউনিয়ন। কনভেনশনের উদ্বোধন করেন সিটুর সর্বভারতীয় সভানেত্রী কে হেমলতা। এ ছাড়াও ছিলেন অল ইন্ডিয়া লোকো রানিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে সি জেমস, অল ইন্ডিয়া গার্ড কাউন্সিলের রামদেও কুমার, ইন্টাগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির রাজা রমন, দক্ষিণ রেলের চেন্নাইয়ের প্রতিনিধি ভি হরিনাম, সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের অমিত মালঙ্গি, অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এস কে জয়সওয়াল প্রমুখ।

    উদ্বোধনী বক্তব্য হেমলতা জানান, ২০১৪ সালের পর থেকে রেল বাজেট তুলে দিয়ে তাকে সাধারণ বাজেটে যুক্ত করার পর থেকেই রেলের সামগ্রিক অধঃপতনে যাওয়া শুরু হয়েছিল। তার সঙ্গে বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলির হাতে রেলকে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। চিত্তরঞ্জন, আইসিএফের মতো সংস্থা, দেশের বিভিন্ন স্টেশনগুলিকে তুলে দিয়ে তাকে বিমানবন্দরে পরিণত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে, যার দায়িত্বে থাকছে বহুজাতিক সংস্থাগুলি।

    সিটুর সর্বভারতীয় নেত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে সারা দেশে রেলের ইঞ্জিন, বগির চাহিদা বাড়ছে, সেখানে কেন স্থায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা কমছে? কেন নিয়োগ বন্ধ থাকছে? যে ঠিকা শ্রমিকরা কাজ করছেন, তাঁরাও প্রয়োজনীয় মজুরি পাচ্ছেন না। সরকারি আইনকে উপেক্ষা করে শ্রমকোডের নামে কর্মীদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। ফলে এই চক্রান্ত রুখতে ঐক্যবদ্ধ রেল শ্রমিকদের একটি যৌথ ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে।

    কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজীব গুপ্ত জানান, যে দিন চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় ৭০০তম রেল ইঞ্জিনের রেকর্ড উৎপাদন হচ্ছে, তার দু’দিন পরে ১লা এপ্রিল থেকেই দেশের বৃহত্তম চিত্তরঞ্জন স্টিল ফাউন্ড্রি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০০ ঠিকা শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এটা আত্মনির্ভর ভারত নয়, আসলে কর্পোরেট নির্ভর ভারত। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, এই মুহূর্তে চিত্তরঞ্জনে ডব্লিউএজি নাইন তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকা শুধু ব্যয় হয় দেশের এবং বিদেশের পাঁচটি কোম্পানির কাছ থেকে যন্ত্রাংশ কেনার জন্য।

    আগামী বছরে ৭০০ ইঞ্জিন তৈরি করতে ৪২০০টি ট্র্যাকসন মোটরের দরকার। অথচ চিত্তরঞ্জনের জন্য মাত্র ১২০০টি ট্র্যাকসন মোটরের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বাকি বাইরে থেকে সরবরাহ করা হবে। এতেই কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নির্মল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এক সময়ে ১৮ হাজারের বেশি শ্রমিক দিয়ে দেড়শো লোকোমোটিভ তৈরি হতো, যার ৮০ থেকে ৯০ ভাগই চিত্তরঞ্জনে তৈরি হতো। এখন সাড়ে সাত হাজার কর্মী দিয়ে ৭০০ ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে, যার আশি থেকে নব্বই শতাংশই বাইরে থেকে জিনিস আসছে। বিপুল শূন্যপদে যেমন নিয়োগ হয়নি, তেমনই একজন লোকো পাইলটকে আট ঘণ্টার পরিবর্তে বাড়তি চার ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। তার সঙ্গে রয়েছে রেল দুর্ঘটনা। অর্থাৎ যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের।

    এই কনভেনশন থেকে রেলের প্রতিটি ডিভিশন, জ়োন এবং উৎপাদন হওয়া কারখানাগুলিতে আন্দোলনের জন্য পাঁচ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)