মাঝেমধ্যেই দাঁতের ব্যথায় জীবন জেরবার হতো বেলগাছিয়ার সৌমেন শীলের। পাড়ার দোকান থেকে পেনকিলার খেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতেন তিনি। কিন্তু গত সাত দিন ধরে ওই ওষুধ খেয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। বাধ্য হয়েই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন সৌমেন। পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, ক্যাভিটির কারণেই এই পরিস্থিতি। ক্যাভিটির জন্য দাঁত যে ভাবে ক্ষয়ে গিয়েছে, তাতে ওই দাঁত তুলে ফেলা ছাড়া গতি নেই।
সৌমেনের মতো দাঁত নিয়ে সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর জার্নাল ‘পাব মেড’–এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে যে, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের ৬২ শতাংশই দাঁতের সমস্যার শিকার। আর ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে দাঁতের সমস্যা রয়েছে ৫২ শতাংশের। মাড়িতে সংক্রমণ, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া এবং দাঁতে গর্ত হয়ে যাওয়া বা ক্যাভিটির সমস্যায় ভোগেন সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ। সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে না-যাওয়ার কারণে দাঁতের সমস্যা আরও বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞরা। দাঁতের সমস্যার কারণে ব্লাডসুগার, পেটের রোগ–সহ বিভিন্ন অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে, এমনটাই বলা হয়েছে ওই গবেষণায়।
দাঁতের সমস্যা কেন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এ দেশে মানুষ সব চেয়ে বেশি অবহেলা করে দাঁতকে। কথার কথা নয়, সত্যিই মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। শরীরের অন্যান্য সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গেলেও দাঁতের ক্ষেত্রে সহ্যের সীমা পেরোনোর পরেই রোগী যান চিকিৎসকের কাছে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়ে যায়।
দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ রাজু বিশ্বাসের পরামর্শ, ‘দাঁতে ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যান। যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। এতে আগামী দিনে সমস্যা আরও বাড়বে।’ তাঁর মতে, ছোটদের মধ্যে দাঁতের সমস্যা বাড়ার কারণ হলো, ফলমূল ও আনাজপাতি বেশি না-খেয়ে চকোলেট, কেক, পেস্ট্রি, হালকা পানীয়ের মতো চিনিসমৃদ্ধ চ্যাটচেটে খাবার বেশি পরিমাণ খাওয়ার অভ্যাস।
আর এক দন্ত চিকিৎসক অন্তরা চৌধুরী বলছেন, ‘দাঁতের ক্ষয় হয় মূলত মিষ্টি জাতীয় খাবার জমে। এই ধরনের খাবার লাগাতার জমার ফলে মুখের মধ্যে ব্যাকটিরিয়ার জন্ম হয় এবং দাঁতের উপরের স্তর ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। পরে সেটাই পরিণত হয় ক্যাভিটি বা গর্তে। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে না-যাওয়ার ফলে সমস্যা আরও বাড়ে।’ ওই বিশেষজ্ঞ এ-ও বলছেন, ‘অনেকেই ভাবেন যে, মেডিকেটেড পেস্ট ব্যবহার করলে দাঁত ভালো থাকে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। এই জাতীয় পেস্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের পেস্ট ব্যবহার না-করাই ভালো।’