• ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেই যাদবপুরে কোপে উপাচার্যরা?
    এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: প্রথমে অমিতাভ দত্ত, তার পরে বুদ্ধদেব সাউ এবং এ বার ভাস্কর গুপ্ত। গত তিন বছরে এ ভাবেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের পরপর অপসারণ করেছেন রাজ্যপাল, আচার্য সিভি আনন্দ বোস। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক— সব মহলের প্রশ্নেই বিদ্ধ তিনি।

    ডান–বাম নির্বিশেষে শিক্ষকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, দখলদারির উদ্দেশ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে রাজভবন। সমাবর্তনের মতো ছাত্রস্বার্থের কথা মাথায় না–রেখে আচার্য পরপর অসম্মানজ‍নক পদক্ষেপ করছেন। ফলে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের প্রশ্ন, এর পরে কি আর কেউ ওই পদে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চাইবেন?

    ২০২৩–এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রো ভিসি অমিতাভ দত্তকে ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেন বোস। কিন্তু কিছু দিন কাটতে না–কাটতেই অমিতাভকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। সূত্রের দাবি, অমিতাভকে দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নিতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাতে সায় না–দেওয়াতেই কোপে পড়তে হয় অমিতাভকে।

    এর পরে বিজেপি–ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গণিতের শিক্ষক বুদ্ধদেব সাউকে ভিসির দায়িত্ব দেয় রাজভবন। কিন্তু রাজ্যপালেরই আপত্তি উড়িয়ে বুদ্ধদেব সমাবর্তনের আয়োজন করেন। কিন্তু সমাবর্তনের আগের রাতেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে বেশ কিছু দিন যাদবপুর উপাচার্যহীন ছিল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভাস্কর গুপ্তকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সমাবর্তনের কারণ দেখিয়েই ভাস্করকে সরানো হলো। বিশ্ববিদ্যালয় এখন আবার উপাচার্যহীন।

    বার বার কেন এমনটা হচ্ছে? তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপার’ দাবি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অবসরের পরেও ‘অনৈতিক ভাবে’ পদে থেকে গিয়েছেন। শিক্ষাজগতের কেউ না–হয়েও দিনের পর দিন ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য। অনেকে রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার জন্য নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে রাজ্যপালকে টাকা দিয়েছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।

    সংগঠনের নেতা তথা যাদবপুরের শিক্ষক মনোজিৎ মণ্ডলের কথায়, ‘আসলে যিনি ওঁর কথা শুনবেন না, মেরুদণ্ড নিয়ে কাজ করবেন, তাঁকেই উনি সরিয়ে দেবেন। একটা ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা আর শায়েস্তা করার মানসিকতা থেকেই রাজ্যপাল এই কাজ করছেন।’ শিক্ষক সমিতি ‘জুটার’ সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘রাজ্য এবং রাজ্যপালের যুদ্ধে উলুখাগড়ার অবস্থা যাদবপুরের। দখলদারির রাজনীতিতে এবং প্রভু–ভৃত্যের সম্পর্ক স্থাপনের জন্যই এই কাজ করা হচ্ছে।’

    ইতিমধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও অভিযোগ, রাজভবন এখনও মুখ্যমন্ত্রীর সায় দেওয়া নামে সিলমোহর দেয়নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ‘কুটা’ও রাজ্যপালের এই মনোভাবের বিরোধিতা করে বিবৃতি জারি করেছে। রবিবার বোলপুরে তৃণমূলপন্থী সরকারি কলেজের শিক্ষক সমিতির বৈঠকে এর তীব্র বিরোধিতা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও।

    এই পরিস্থিতি নিয়ে কী বলছেন যাদবপুরের অপসারিত ভিসিরা? ভাস্কর বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্বাধীন সংস্থা। এই পরিস্থিতি বারবার তৈরি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুখকর নয়।’ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কোপ এসে পড়ছে ভিসিদের উপরে।’ অমিতাভর প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি।

  • Link to this news (এই সময়)