কৌশিক দে, মালদা
স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে ধুমধাম করে ইদ উদযাপনের পরিকল্পনা ছিল গৃহকর্তার। কিন্তু উৎসবে তাল কাটল স্বামী–স্ত্রীর কথাকাটাটি। দিন দু’য়েক আগে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি হওয়ায় রাগ করে বাড়ি ছেড়েছেন স্ত্রী। তিন দিন ধরে বৌয়ের খোঁজ না-পেয়ে তাই পুলিশের দ্বারে হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন পুরাতন মালদার বছর চুয়ান্ন’র মহিদুর রহমান।
বড়বাবুর কাছে গিয়ে তাঁর কাতর মিনতি, ‘বৌকে খুঁজে দিন স্যর। ওর জন্য শাড়ি কিনেছি। ইদটা যেন কোনও ভাবেই মাটি না হয়ে যায়।’ ঘনঘন থানায় গিয়ে বৌয়ের খোঁজ নেওয়ায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু গৃহকর্তার এমন অসহায়তায় তাঁরা রাগ দেখাতেও পারছেন না।
পুরাতন মালদা থানার মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের বালুয়াটোলার বাসিন্দা মহিদুর। শুধু থানাতে নয়, হাতে স্ত্রী-র ছবি নিয়ে মানুষের দোরে দোরে ঘুরছেন তিনি। বলছেন, ‘ঝগড়াঝাঁটি তো সব সংসারেই হয়। তাই বলে এ ভাবে রাগ করে বৌ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে, কে জানতো?’
মহিদুর আরও বলেন, ‘সেরিনা বেশি চিৎকার চেঁচামেচি করলে ওর মাথার ঠিক থাকে না। এর আগে অনেক অশান্তি হয়েছে। তখন ও বাপের বাড়ি চলে যেত। পরে ফিরেও আসত। কিন্তু তিন দিন ধরে ওর কোনও খোঁজ নেই। কোথায় আছে, কেমন আছে, কিছুই জানি না। ইদে ওর জন্য কেনাকাটা করেছি। স্ত্রীকে খুঁজে না-পেলে আমি বাঁচব না।’
তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। পরে মাথা ঠান্ডা হতেই ফিরে এসেছেন তিনি। কিন্তু এ বারে বাপের বাড়িও যাননি। স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সকলে। মহিদুরের আক্ষেপ, ‘ইদের আগে প্রতিটা বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে। শুধু আমার বাড়িতেই অন্ধকার।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিখোঁজ সেরিনা বিবি (৪৫) সঙ্গে মহিদুরের বিয়ে হয় দু’দশক আগে। দুই ছেলে নিয়ে তাঁদের সংসার। মহিদুর পেশায় ভিন রাজ্যের শ্রমিক সরবরাহকারী। ফলে টাকা পয়সার দিক থেকে তেমন অভাব নেই পরিবারের। ছেলেরাও সাবালক এবং বাবার সঙ্গেই কাজ করেন।
তাঁদের ছেলে সায়ন শেখের কথায়, ‘গত ২৬ মার্চ রাতে মা–বাবার মধ্যে উৎসবের কেনাকাটা আর রান্নাবান্না নিয়ে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। পরের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা বাড়িতে নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম, দাদুর বাড়ি গিয়েছে। ঠিক চলে আসবে। বেলা গড়াতেও না-ফেরায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মা সেখানেও যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের খোঁজ করতে বাবা মাঝেমধ্যেই পুরাতন মালদা থানায় থানায় গিয়ে বসে থাকছে।’
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ঝগড়াঝাঁটি যতই হোক, তাঁদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা রয়েছে। উৎসবের মরশুমে যেন তাঁদের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যদিও পুরাতন মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, সেরিনা বিবির নিখোঁজের অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। প্রাথমিক খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, আংশিক মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষ্যণ রয়েছে তাঁর। মাঝেমধ্যে ঝগড়াঝাটি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অভ্যেস রয়েছে। তবে তাঁর খোঁজে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।