• জলপাইগুড়ির দীপক ও সোনার কাছে সাপ যেন আদরের ‘সোনামণি’
    এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: বাড়ি, অফিস বা স্কুলে সাপ ঢুকেছে শুনলেই সটান হাজির হয়ে যান তাঁরা। হাতের জাদুতে এক নিমেষে বশ করেন কিং কোবরা, গোখরোকে। একজন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির আনন্দনগরের বাসিন্দা, পেশায় নেচারোথেরাপিস্ট সোনা দে। বছর পঁয়ত্রিশের মহিলা চাকরি করেন ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে।

    অন্যজন, আলিপুরদুয়ারের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রামের দীপক বিশ্বশর্মা। চাকরি করতেন রেলে। কাজ ফেলে সাপ ধরতে গিয়ে মুখঝামটা শুনতে হয়েছে রেলকর্তাদের। আর মন টেকেনি। ছ’মাসেই ছেড়ে দেন চাকরি।

    সাপ যেন সোনার কাছে আদরের ‘সোনামণি’। দশ বছর আগে লাটাগুড়ি জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। আহত অবস্থায় একটা সাপকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করেন। গাছের পাতা দিয়ে সাপের মুখটা ঢেকে নিয়ে চলে যান লাটাগুড়ি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। সেই শুরু। এর পরে স্থানীয় একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন।

    সেই সংস্থা মূলত সাপ ও অন্য বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার, শুশ্রুষা করে। সাপ সম্পর্কে ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ, পড়াশোনা করে নিজেকে তৈরি করেন সোনা। ক্রমে বিষধর সাপ ধরায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এখন যে কোনও সাপ ধরা তার কাছে ‘বায়ে হাত কা খেল’।

    ময়নাগুড়ি শহর এলাকায় কোথাও সাপ বের হলে ডাক পড়ে তাঁর। তিনি বলেন, ‘সাপ ধরার কৌশল পুরোপুরি না–জানার জন্য প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগত। এখন ভালোই লাগে। যেখানে সাপ উদ্ধার করতে যাই সেখানে গিয়ে সাপ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করি। সাপ যে বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সাহায্য করে, সেই বিষয়ে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করি।’

    ডুয়ার্সে সর্পপ্রেমী হিসেবে পরিচিত দীপক। বছর পঁয়ত্রিশের দীপকের কাছে সাপ ধরাটা অনেকটা নেশার মতো। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ এই কাজের জন্য তাঁকে পুরস্কৃতও করেছে। সাধারণ মানুষ তাঁকে ডাকেন স্নেকম্যান বলে। সাপ ধরার নেশায় রেলের চাকরি ছেড়ে তাঁর কোনও আপশোস নেই।

    দীপকের কথায়, ‘শুধু সাপ ধরা নয়, প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সাপ নিয়ে সেমিনার হলে আমাকে ডাকা হয়। সাপ দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও মানে হয় না, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সেটা ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিই। বেশ ভালো লাগে। রেলে চাকরি করলে এই কাজটা করতে পারতাম না। আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। সাড়ে চার বিঘে জমি আছে। চাষাবাদ করি। আর বাড়িতে মোবাইলের টাওয়ার রয়েছে। সেখানে থেকে ভাড়া পাই। সংসার চলে যায়।’ (তথ্য বাসুদেব ভট্টাচার্য ও সুজিত রায়)

  • Link to this news (এই সময়)