আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেলগ কলেজে সেদিন উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। উন্মাদনার কারণ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কেলগে রাজনীতির ময়দানে দীর্ঘ পথচলার কথা, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর উন্নয়ন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন, তাঁর জমানায় শিশুকন্যা ও নারীদের জীবনের মানোন্নয়নের কথা বলতে গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা-ভাষণের জন্য যে বিলেতে উন্মাদনা তুঙ্গে, মমতা অক্সফোর্ডে পৌঁছনোর আগেই জানা গিয়েছিল তা। অনেক আগে থেকেই বিশেষ অনুষ্ঠানের দর্শক হওয়ার রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছিল, হাউসফুলও হয়ে গিয়েছিল, তথ্য প্রকাশ্যে এসেছিল আগেই। প্রায় তিনশ মানুষ নানা প্রান্ত থেকে হাজির হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে।
মমতা তাঁর জীবনের কথা, লড়াই সংগ্রামের কথা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু মাঝে হঠাৎ ছ-সাতজন হলের ভিতরে একপ্রকার অসভ্যতা শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথার মাঝেই গলা চড়িয়ে আক্রমণ করতে শুরু করেন কুৎসিত ভঙ্গিতে। যেসব প্রশ্ন করেন, খুব সহজেই বোঝা যায়, মমতার সেদিনের ভাষণ-বক্তব্যে সেসব প্রশ্ন একেবারেই খাপছাড়া ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, মমতার কেলগ-বক্তৃতা বাংলা, ভারত ছাড়িয়ে বহু মানুষ লাইভ শুনছিলেনও। বিশৃঙ্খলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ তাঁরাও।
করণ বিলিমোরিয়া, গোটা ঘটনায় মমতার পাশেই ছিলেন যিনি, সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থায় একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ঠিক কী পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছিলেন ওই ছ-সাতজন। কীভাবেই বা ওই পরিস্থিতিতেও ধৈর্য হারাননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। করণ বলছেন, সেদিন যে কয়েকজন এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই এসএফআই ইউকে শাখার সদস্য। তাঁদের কাউকেই ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না তিনি।
উল্লেখ্য, সেদিন শুধু অক্সফোর্ড থেকে নয়, সে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ গিয়েছিলেন মমতার কথা শুনতে। হঠাৎ এরকম গোলমাল শুরু হওয়ায় তাঁরাও বিরক্ত হয়ে পড়েন। যাঁরা সুস্থ পরিবেশে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে গিয়েছিলেন, তাঁরাই শুরু করেন পাল্টা আপত্তি। প্রতিবাদের নামে চেঁচামেচি, প্ল্যাকার্ড-প্রদর্শনের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেন, তাঁরা কথা শুনতে এসেছেন মমতার। করণও জানিয়েছেন, তিনি বারবার চিৎকার বন্ধ করতে বলেছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মমতাও বিন্দুমাত্র ধৈর্য হারাননি। মমতা সেদিন অধৈর্য না হয়ে গিয়ে আয়োজকদের বলেন, এরকম সমস্যা এই ধরনের অনুষ্ঠানে হতে পারে। এর পর উপস্থিত জনতার চাপে দলটি প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আন্দোলনের নৌকায় জল না পেয়ে স্থানত্যাগ করে বলা চলে। সাক্ষাৎকারে করণের কথাতেও মমতার ধৈর্যের প্রশস্তি।
বিশেষ দিনে নিরাপত্তায় ত্রুটি রাখেনি অক্সফোর্ডও। কেলগ কলেজ ও অক্সফোর্ডের নিরাপত্তারক্ষীরা সদা সতর্ক ছিলেন এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে। গোটা ঘটনার পর, আয়োজকদের তরফ থেকে করণকে মমতার কাছে ক্ষমা চাইতেও দেখা যায়। তিনি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গোটা ঘটনায় মমতা ভীষণ ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ ছিলেন।
পড়ুয়া সংখ্যার বিচারে কেলগ অক্সফোর্ডের বৃহত্তম কলেজ। সেখানে মহিলা রাজনীতিক হিসেবে মমতার কথা শোনার উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থায় মমতার রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু তথ্য তুলে ধরেন করণ। কেলগের সেদিনের অনুষ্ঠানের উৎসাহই আসলে প্রতিবাদীদের সংখ্যালঘু করে দিয়েছে। অল্পবিস্তর চেঁচামেচি হলেও শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ঠান্ডা মাথায়, সহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে যেভাবে পরিস্থিতি সামেলছেন সেটা সত্যই শিক্ষণীয়।