বকশিস চেয়েছিলেন ‘নিশ্চয়যান’-এর চালক। এক দু’শো টাকা নয়, ৪০০ টাকা। প্রসূতির স্বামী তা দিতে অস্বীকার করায় সদ্যোজাত সন্তান-সহ মাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ‘নিশ্চয়যান’-এর চালকের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেল ৩টে নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের সামনে এই ঘটনা ঘটে। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যের একটি সরকারি পরিষেবা। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে আসা কিংবা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ছাড়ার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া হয়। ১০২ নম্বরে ডায়াল করলেই এই বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে যায় হাসপাতালের সামনে।
গত ২৫ মার্চ স্ত্রীকে মাতৃমা বিভাগে ভর্তি করেছিলেন বেলদার ত্রিলোচন জানা। সে দিনই সন্তানের জন্ম হয়। সোমবার বিভাগীয় চিকিৎসকেরা প্রসূতিকে ছুটি দেন। সেই মতোই এ দিন দুপুরে সদ্যোজাত সন্তান ও স্ত্রীকে বাড়ি ফেরানোর জন্য নিশ্চয়যান ঠিক করেন বেলদার ত্রিলোচন জানা। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের আরেক মহিলা সদস্য। মাতৃমা বিভাগের সামনে নিশ্চয়যান পৌঁছেও যায়। একে একে তাতে উঠে পড়েন সকলে। অভিযোগ, এর পরই ওই চালক ৪০০ টাকা দাবি করেন।
ত্রিলোচন পাল্টা ওই চালককে জানান, এত টাকা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি জানতে চান, বিনামূল্যে সরকারি পরিষেবার জন্য কেন টাকা দিতে হবে? অ্যাম্বুল্যান্স চালক জবাব দেন, ‘এটা বকশিস। আর তা ছাড়া একজন অতিরিক্ত যাত্রী আছেন আপনাদের সঙ্গে।’
এ নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অ্যাম্বুল্যান্স চালক ত্রিলোচনদের গাড়ি নেমে যেতে বলেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় সংবাদমাধ্যমও। সংবাদমাধ্যমকে দেখেই ঘাবড়ে যান ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালক। ক্যামেরার সামনে তিনি দাবি করেন, ‘ওটা আবদার করে চেয়েছিলাম। আমাদের বকশিস হিসেবে। দাবি করিনি। আর আমি তাঁদের নেমে যেতে বলিনি। ওঁরাই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে যান।’ পরে যদিও বিনা পয়সায়ই বাড়িতে পৌঁছে দেন তাঁদের।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী এই সময় অনলাইনকে বলেন, ‘এই পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আপনাদের মাধ্যমেই বিষয়টি শুনলাম। আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে, আমরা খতিয়ে দেখব।’
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিশ্চয়যান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এক অ্যাম্বুল্যান্স মালিকও জানান, প্রসূতিদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং সন্তান-সহ প্রসূতিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই তাঁদের এই পরিষেবা। যদি কেউ টাকা চেয়ে থাকে, অন্যায় কাজ করেছেন। তাঁরাও বিষয়টি দেখছেন।